
দুবাই থেকে ভারতে সোনা পাচারের একটি বড় নেটওয়ার্কের তদন্তে নামল সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)। রাজস্ব গোয়েন্দা অধিদপ্তর (ডিআরআই) এর অভিযোগের ভিত্তিতে এই তদন্ত শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ডিআরআই অভিনেত্রী রান্যা রাও সহ বেশ কয়েকজনকে সোনা পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে। তদন্তে উঠে এসেছে, এই পাচার চক্রে সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি ব্যক্তিরা জড়িত থাকতে পারেন।
কী ঘটেছে?
৩ মার্চ, ডিআরআই বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অভিনেত্রী রান্যা রাওকে গ্রেপ্তার করে। তিনি দুবাই থেকে ১৪ কেজি সোনা ভারতে আনার চেষ্টা করছিলেন। এরপর ৬ মার্চ, মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুই নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা ২১.২৮ কেজি সোনা পাচার করার চেষ্টা করছিল। ডিআরআই জানিয়েছে, জব্দ করা সোনার মূল্য প্রায় ১৮.৯২ কোটি টাকা।
ডিআরআই-এর তদন্তে আরও জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া দুই বিদেশি নাগরিক এর আগেও বেশ কয়েকবার মুম্বই বিমানবন্দর হয়ে ভারতে এসেছেন। এছাড়াও, রান্যা রাওয়ের বাড়ি থেকে ২.০৬ কোটি টাকার সোনার গয়না এবং ২.৬৭ কোটি টাকার নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, রান্যা রাওও বেশ কয়েকবার দুবাই গেছেন।
সরকারি কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ
ডিআরআই-এর তদন্তে উঠে এসেছে, এই সোনা পাচার চক্রে সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি ব্যক্তিরা জড়িত থাকতে পারেন। এই পুরো নেটওয়ার্কের শিকড় আন্তর্জাতিক ও জাতীয় স্তরে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই জটিলতা বিবেচনায় ডিআরআই মামলাটি সিবিআই-এর হাতে তুলে দিয়েছে।
সিবিআই ইতিমধ্যেই অজ্ঞাত সরকারি আধিকারিক ও বেসরকারি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করেছে। একইসঙ্গে, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত মামলা নথিভুক্ত করেছে এবং রান্যা রাওয়ের বাড়ি ও অফিসে অভিযান চালিয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংযোগ
তদন্তে দেখা গেছে, এই সোনা পাচার চক্রের আন্তর্জাতিক সংযোগ রয়েছে। দুবাইয়ের নিরাপত্তা সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে সিবিআই এই চক্রের আন্তর্জাতিক শাখার তদন্ত করবে। সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, এই চক্রটি দুবাই থেকে ভারতে সোনা পাচারের জন্য একটি সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।
রান্যা রাও কেস
রান্যা রাওয়ের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা সোনার গয়না ও নগদ অর্থ এই মামলাকে আরও জটিল করে তুলেছে। ডিআরআই-এর মতে, রান্যা রাও এই চক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হতে পারেন। তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগও তদন্তাধীন।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
সিবিআই এবং ইডি যৌথভাবে এই মামলার তদন্ত চালাচ্ছে। তদন্তে সরকারি কর্মকর্তা, বিদেশি নাগরিক এবং বেসরকারি ব্যক্তিদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই চক্রের আন্তর্জাতিক সংযোগ এবং অর্থ পাচারের রুট সম্পর্কে আরও তথ্য উন্মোচনের চেষ্টা চলছে।
এই মামলাটি সোনা পাচারের একটি বড় নেটওয়ার্কের ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। সিবিআই এবং ইডি-এর তদন্ত এই চক্রের মূল হোতাদের চিহ্নিত করতে সক্ষম হলে, তা সোনা পাচার রোধে একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে।