
বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের ‘কুকথা’ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে যে তোলপাড় চলছিল, সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এবার রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের এক বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন ঝড়। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করতে গিয়ে সুকান্ত এমন ‘কুরুচিকর’ শব্দের ব্যবহার করেছেন, যা সমাজের নানা স্তর থেকে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস সরাসরি মাঠে নেমে এই মন্তব্যকে ‘নারীবিদ্বেষী’ ও ‘ঘৃণ্য’ আখ্যা দিয়ে সুকান্তর অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে।
ভবানীপুরে সুকান্তর বিস্ফোরক মন্তব্য: ‘আইনটাকে সোনাগাছির সে ওয়ার্কারে পরিণত করেছেন!’**
ভবানীপুরে গাড়িতে বসে পুলিশের উদ্দেশে সুকান্ত মজুমদারকে বলতে শোনা যায়, “আপনারা আইনটাকে না সোনাগাছির সে** ওয়ার্কারে পরিণত করেছেন, পশ্চিমবঙ্গের আইনটাকে।” তার এই মন্তব্যের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তৃণমূল কংগ্রেস তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তৃণমূলের আইটি সেলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, “এটা একজন জনপ্রতিনিধির ভাষা? বঙ্গ বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা অত্যন্ত ঘৃণ্য এবং নিম্নরুচির। পুলিশকে অপমান করতে গিয়ে উনি যৌনকর্মীদের কাজকে শুধু বিদ্রুপই করলেন না, বিজেপি-র মানসিকতাকেও তুলে ধরলেন। এটা শুধু নারীবিদ্বেষ নয়, রাজনীতির নামে নোংরামি। আমরা এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে ক্ষমা চান সুকান্ত মজুমদার।”
কুণাল ঘোষের আক্রমণ: ‘কতটা যন্ত্রণা বোঝেন সুকান্ত মজুমদার?’
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সুকান্তের এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, “সুকান্ত মজুমদার গত কয়েকদিন ধরে কুৎসিত কথা বলে চলেছেন। এবার এটা কী করলেন? সোনাগাছির সে** ওয়ার্কার বলে চিৎকার করে অপমান করছেন। তাঁদের নিম্নমানের দৃষ্টিতে দেখে রাজনৈতিক তুলনা টেনে, বিকৃত বিবৃতি দিলেন। এই মা-বোনেদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে ওঁকে। সোনাগাছির সে** ওয়ার্কার, মানে বোঝেন? কতটা যন্ত্রণা, কতটা কষ্ট, কতটা অশ্রু, কতটা লড়াই থাকে, বোঝেন সুকান্ত মজুমদার? আপনি মধ্যযুগে বাস করেন? এটা বিজেপি-র দৃষ্টিভঙ্গি। এরা মা-বোনেদের কুৎসিত ভাবে…একজন বলেছিল বীরবাহা হাঁসদা জুতার তলায় থাকে। সোনাগাছির মা-বোনেরা একটা পেশায় আছেন। আপনাকে কে অধিকার দিল ওই মা-বোনেদের অপমান করার?”
কুণাল ঘোষের এই মন্তব্য সুকান্তের বক্তব্যকে শুধুমাত্র বিতর্কিত নয়, বরং সমাজের একটি বিশেষ অংশের মানুষের প্রতি চরম অসংবেদনশীল ও অপমানজনক বলে চিহ্নিত করেছে।
‘অনুব্রতে অপরাধ, সুকান্তে ভালো?’ – তৃণমূলের পাল্টা প্রশ্ন
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্প্রতি আইসি-কে ফোনে অনুব্রত মণ্ডলের ‘কুকথা’ রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তুলেছিল। জাতীয় মহিলা কমিশনও এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছিল। সেই আবহেই সুকান্তর এই মন্তব্যকে তৃণমূলের আইটি সেলের দেবাংশু ভট্টাচার্য ‘হে বিজেপি, পোড়া মুখ কত হবে কালো? অনুব্রতে অপরাধ, সুকান্তে ভালো?’ বলে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত বিজেপি-র তরফে সুকান্ত মজুমদারের এই মন্তব্য নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে, একজন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এবং রাজ্য সভাপতির এই ধরনের মন্তব্য রাজ্য রাজনীতির বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছে, যা আগামী দিনগুলিতে আরও তীব্র আকার ধারণ করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। নারী সম্মান এবং রাজনৈতিক শালীনতার প্রশ্নটি এখন রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে এক বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।