সিনিয়র-জুনিয়রদের তুমুল ধস্তাধস্তি, ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠলো বর্ধমান মেডিক্যাল

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে বুধবার ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল, যখন দু’দল পড়ুয়ার মধ্যে বচসা শুরু হয়। সাসপেন্ড হওয়া সিনিয়র চিকিৎসক–পড়ুয়াদের দাবির মুখে, তাঁরা হস্টেলে ফেরানোর জন্য স্লোগান তুললে, এর প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ান জুনিয়র চিকিৎসকরা। এরপর বচসা থেকে ধস্তাধস্তি পর্যন্ত পরিস্থিতি পৌঁছায়, যার ফলে কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশ ও র‌্যাফকে অবিলম্বে তলব করতে বাধ্য হন।

সাসপেন্ড হওয়া চিকিৎসক–পড়ুয়াদের মধ্যে প্রধান ছিলেন অভীক দে ও বিরুপাক্ষ ঘোষ। তাঁদের ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ তুলতে গিয়ে পাল্টা স্লোগান তোলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। এর মধ্যে একটি অভিযোগ ওঠে, ওই সিনিয়র ছাত্ররা এক ছাত্রীসহ দু’জনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। এদিকে, কলেজ ক্যাম্পাসে এই ঘটনায় উত্তেজনা তীব্র হয়ে ওঠে, যার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ এবং র‌্যাফের বিশাল বাহিনী ক্যাম্পাসে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ সময় কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক চলছিল, তবে সেখানেও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয়। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সম্প্রীত দত্ত জানান, ‘২০২৩-২৪ সেশনে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীরা যেভাবে হস্টেলে এসে সাসপেন্ড হওয়া ছাত্রদের মিটিংয়ে যোগ দিয়েছে, তাতে তারা জানাচ্ছে যে, পরীক্ষায় সব ম্যানেজমেন্ট করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে এবং প্রতিবাদ করলে আমাদের ভয় দেখানো হচ্ছে।’

অন্যদিকে, সিনিয়র ছাত্রী তন্দ্রাশ্রী সরকার মন্তব্য করেন, ‘অভীক এবং বিরুপাক্ষের ঘনিষ্ঠ সিনিয়র ছাত্ররা ফের থ্রেট কালচার চালু করার চেষ্টা করছে।’

পেট্রল-ডিজেল মূল্যবৃদ্ধি এবং মেডিক্যাল কলেজের চলমান সমস্যাগুলোর মধ্যেও সাসপেন্ড হওয়া ছাত্রদের ফেরানোর দাবিতে বেশ কিছু পড়ুয়া অধ্যক্ষ মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। তাঁদের দাবি, হস্টেলে না থাকার কারণে আর্থিক খরচ বাড়ছে এবং একাধিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে, জুনিয়র চিকিৎসকরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে পাল্টা স্মারকলিপি জমা দেন, এবং থ্রেট কালচার চালু হওয়ার চেষ্টা রুখে দেওয়ার দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন।

বিক্রম বিশ্বাস নামে এক সাসপেন্ড হওয়া ছাত্র জানান, “আমাদের ডিপার্টমেন্টের দু’জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা এই দাবি জানাচ্ছি। সিঁড়িতে ওঠার সময় কিছু ধাক্কাধাক্কি হয়েছিল, তবে এর চেয়ে বেশি কিছু হয়নি।”

এদিকে, কলেজের অধ্যক্ষ মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “কাউন্সিল বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এবং সব বিষয় স্বাস্থ্য দপ্তরের কাছে পাঠানো হয়েছে। দপ্তর থেকে যা নির্দেশ আসবে, আমরা তা অনুসরণ করব।”

এ ঘটনায় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তবে কর্তৃপক্ষ তার মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy