চলতি বছরও সার্চ ইঞ্জিনের বাজারে গুগলের আধিপত্য অব্যাহত রয়েছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, এ বাজারে টেক জায়ান্টটির হিস্যা ছিল ৮৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। স্ট্যাটকাউন্টারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলছে, ২০১৪ সালের পর গুগলের বাজার হিস্যা ৯০ শতাংশের নিচে নেমেছে খুব কম সময়। কোম্পানিটি ডেস্কটপ, ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনসহ সব ডিভাইসেও শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
চলতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯০ শতাংশ অনুসন্ধান পরিচালিত হয় গুগলের মাধ্যমে। অর্থাৎ প্রতি ১০ জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর প্রায় নয়জন গুগল ব্যবহার করে তথ্য অনুসন্ধানের জন্য। ২০১০ থেকে এ পর্যন্ত সার্চ ইন্ডাস্ট্রিতে আধিপত্য ধরে রেখেছে গুগল।
বাজার অংশীদারির তালিকায় গুগলের পর আছে মাইক্রোসফটের বিং সার্চ ইঞ্জিন। যদিও গুগলের সঙ্গে তুলনায় বিং অনেক পিছিয়ে। নভেম্বর পর্যন্ত কোম্পানিটির বাজার অংশীদারি মাত্র ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা এক বছর ধরে ৩-৪ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে। ২০২৩ সালের একই সময় কোম্পানিটির বাজার অংশীদারি ৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমে যায়। এ তালিকায় তৃতীয় শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিন হলো রাশিয়ার ইয়ানডেক্স, ২ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে রাশিয়ায় ইয়ানডেক্সের বাজার অংশীদারির পুরোপুরি আলাদা চিত্র দেখা যায়। ওই দেশে কোম্পানিটির শেয়ার ৭২ দশমিক ৭৪ শতাংশ, যা গুগলের ২৫ দশমিক ৮৫ শতাংশের তুলনায় বেশি। স্ট্যাটকাউন্টারের তথ্যানুযায়ী, রাশিয়ায় প্রায় ৯৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ইয়ানডেক্স ও গুগল উভয়েই ব্যবহার করে।
গুগল, বিং ও ইয়ানডেক্সের পর ১ দশমিক ২৪ শতাংশ অংশীদারি নিয়ে চতুর্থ জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন হলো ইয়াহু। এ তালিকায় চীনের প্রধান সার্চ ইঞ্জিন বাইডু পঞ্চম স্থানে রয়েছে। কোম্পানিটির বাজার অংশীদারি দশমিক ৮১ শতাংশ। প্রাইভেসি বেইসড সার্চ ইঞ্জিন ডাকডাকগো রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে, যার বাজার অংশীদারি দশমিক ৭৯ শতাংশ। বিং, ইয়ানডেক্স, ইয়াহু, ডাকডাকগো ও বাইডুর সম্মিলিত বাজার অংশীদারি ৯ দশমিক ১৮ শতাংশ, যা গুগলের তুলনায় অনেকটাই কম।
আবার শীর্ষ সার্চ ইঞ্জিনগুলোর বাজার অংশীদারি ডিভাইস অনুযায়ী ভিন্ন হয়। যেমন গুগলের অংশীদারি ডেস্কটপের ক্ষেত্রে ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ট্যাবলেটে ৮৯ দশমিক ৫০ শতাংশ আর স্মার্টফোনে সার্চ ইঞ্জিনটির বাজার অংশীদারি সবচেয়ে বেশি, ৯৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
সফলতার সঙ্গে সার্চ মার্কেটের এ আধিপত্য সম্প্রতি গুগলের জন্য বেশ জটিলতাও তৈরি করেছে। এর আগে আগস্টে অনলাইন সার্চ মার্কেটে অ্যালফাবেট ইনকরপোরেটেড মালিকানাধীন গুগল অবৈধভাবে একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করেছে বলে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় রায় দেন যুক্তরাষ্ট্রের এক জেলা জজ। ওই রায়ের পর গুগলকে ভেঙে দিতে ফেডারেল আদালতের এক বিচারককে অনুরোধ করার কথা বিবেচনা করে মার্কিন বিচার বিভাগ (ডিওজে)। এরপর গত মাসে মার্কিন সরকার গুগলকে আংশিকভাবে ভেঙে দেয়ার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়। গুগলকে যেন ক্রোম ওয়েব ব্রাউজার বিক্রি করতে বাধ্য করানো হয়, সে বিষয়ে ফেডারেল বিচারকের কাছে আবেদন করা হয়।
এ বিষয় সরকারি আইনজীবীরা উল্লেখ করেন, ‘গুগলের কর্মকাণ্ডের কারণে বাজারে প্রতিযোগিতা ন্যায্য হচ্ছে না এবং গুগলের সাফল্য অবৈধভাবে অর্জিত অন্যায্য সুবিধার ফল। প্রতিকারের মাধ্যমে অবশ্যই এ ফাঁকগুলো বন্ধ করতে হবে এবং গুগল যেন সুবিধা নিতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।’
চলতি মাসে গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই জানান, আগামী বছর গুগলের সার্চ ইঞ্জিনে বড় পরিবর্তন আসবে। নিউইয়র্ক টাইমসের ডিলবুক সামিটে তিনি বলেন, ‘গুগল এখন আগের চেয়ে আরো জটিল প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে।’
২০২৫ সালের শুরুতেই সার্চ ইঞ্জিনের এ নতুন কর্মদক্ষতার দেখা পাওয়া যাবে বলে জানান পিচাই। এরই মধ্যে গুগল এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের সার্চ প্লাটফর্মে নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত করেছে। এতে রয়েছে এআই জেনারেটেড সারাংশ ও ভিডিওভিত্তিক অনুসন্ধানের জন্য উন্নত লেন্স টুল। গুগল তাদের নতুন জেমিনি এআই মডেল নিয়েও কাজ করছে।
গুগল বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম প্রধান এবং জনপ্রিয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৮ সালে ল্যারি পেইজ এবং সার্গেই ব্রিনের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হওয়া গুগল মূলত একটি সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এটি একটি বৃহৎ করপোরেশন, যার পরিসর শুধু সার্চ ইঞ্জিনেই সীমাবদ্ধ নয়। গুগলের পণ্য ও সেবার মধ্যে জিমেইল, গুগল ম্যাপস, গুগল ড্রাইভ, ইউটিউব, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এবং গুগল ক্লাউড অন্যতম।