
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেন ছিনতাইয়ের ঘটনায় আফগানিস্তান ও ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তান। তবে উভয় দেশই এই অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। এই ঘটনা নিয়ে তিন দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, জাফর এক্সপ্রেসে হামলার পরিকল্পনা আফগানিস্তান থেকে করা হয়েছে এবং এর পেছনে আফগানিস্তান ও ভারত যৌথভাবে পাকিস্তানের সন্ত্রাসীদের সহায়তা করছে। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে প্রমাণ আছে যে এই হামলার ছক আফগানিস্তানে তৈরি হয়েছে। তবে আমাদের নীতিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি—ভারত পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের জন্য দায়ী।” শাফকাত আরও অভিযোগ করেন, ভারত বিশ্বজুড়ে ‘হত্যার প্রচার’ চালাচ্ছে এবং বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-কে সমর্থন করে ভারতীয় গণমাধ্যম তাদের গৌরবান্বিত করছে।
ভারতের জবাব:
শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল পাকিস্তানের অভিযোগের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সারা বিশ্ব জানে আতঙ্কবাদের আসল কেন্দ্র কোথায়। অন্যের দিকে আঙুল তোলার আগে পাকিস্তানের উচিত নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার দিকে নজর দেওয়া।” ভারত স্পষ্ট করে জানিয়েছে, তারা এই ধরনের অভিযোগকে গুরুত্ব দেয় না এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতার জন্য অন্যকে দায়ী করার প্রবণতার সমালোচনা করেছে।
আফগানিস্তানের প্রতিক্রিয়া:
আফগানিস্তানের তালেবান সরকারও পাকিস্তানের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল কাহার বালখি বলেন, “পাকিস্তান ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে। আমরা এই ঘটনার সঙ্গে কোনওভাবেই জড়িত নই। পাকিস্তানকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য না করে এবং নিজেদের নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে মনোযোগ দেয়।” আফগানিস্তানের এই বক্তব্যে পাকিস্তানের অভিযোগকে ‘অস্বীকৃত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘটনার পটভূমি:
মঙ্গলবার বেলুচিস্তানে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেন ছিনতাইয়ের ঘটনায় বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) দায় স্বীকার করেছে। এই হামলায় ২১ জন যাত্রী ও ৪ জন সেনা সদস্য নিহত হন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ৩৩ জন হামলাকারীকে হত্যা করে ৩৪৬ জন যাত্রীকে উদ্ধার করেছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, হামলাকারীরা আফগানিস্তানে অবস্থানরত নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগে ছিল।
অভিযোগ-প্রত্যাখ্যানের চক্র:
পাকিস্তান সাধারণত বেলুচিস্তানের অস্থিরতার জন্য ভারতকে দায়ী করে থাকে। তবে এবার আফগানিস্তানকে প্রধান নিশানা করা হয়েছে। শাফকাত আলী খান জানান, “এই ঘটনায় আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে ভারতের সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার তথ্যও অপরিবর্তিত।” তিনি ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগও তুলেছেন।
পরিস্থিতির গুরুত্ব:
বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিএলএ এই অঞ্চলের স্বাধীনতার দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, বহিরাগত শক্তি এই গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে। তবে ভারত ও আফগানিস্তান বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এই ঘটনা তিন দেশের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অভিযোগ-পাল্টা জবাবের মধ্যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। তবে এই বিতর্কের ফলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর কী প্রভাব পড়বে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।