
প্রকৃতির নিয়মে সময়ের কিছুটা আগেই আন্দামান সাগরে প্রবেশ করেছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণ আন্দামান সাগর, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং উত্তর আন্দামান সাগরে ইতিমধ্যেই বর্ষার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর আগমনের ফলে গত দু’দিনে নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই সময়ে উল্লিখিত এলাকাগুলিতে পশ্চিমা বায়ুর গতি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেড় থেকে সাড়ে চার কিলোমিটার উপরে বাতাসের গতিবেগ ২০ নটসের বেশি থাকছে, যা বর্ষা আগমনের অনুকূল পরিস্থিতিকেই নির্দেশ করে।
সাধারণত আন্দামান হয়ে কেরলে বর্ষা প্রবেশ করার পরই সারা দেশে বর্ষার মরশুম শুরু হয়। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে দক্ষিণ আরব সাগর, মলদ্বীপ ও কোমোরিন এলাকা, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের মধ্যভাগ এবং আন্দামান সাগরের বাকি অংশে বর্ষা আরও ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে বর্ষা ভারতের মূল ভূখণ্ডে, বিশেষ করে কেরলের দিকে এগিয়ে যাবে।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এবার ২৭ মে কেরলে বর্ষার আগমন ঘটতে পারে, যা স্বাভাবিক সময় ১ জুনের চেয়ে প্রায় পাঁচ দিন আগে। এই পূর্বাভাস সত্যি হলে, ২০০৯ সালের পর ১৪ বছর বাদে বর্ষা এত আগে দেশের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করবে। সাধারণত, কেরলে বর্ষা পা রাখার পর প্রায় ৮ জুলাইয়ের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে বিদায় নিতে শুরু করে। ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সারা দেশ থেকে বর্ষা বিদায় নেয়।
কৃষিপ্রধান দেশ ভারতের জন্য বর্ষা মরশুমের গুরুত্ব অপরিসীম। এবছর এল নিনোর প্রভাব থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (IMD) এপ্রিল মাসেই পূর্বাভাস দিয়েছিল যে এবছর স্বাভাবিকের ১০৫ শতাংশ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশের কৃষির জন্য একটি আশাব্যঞ্জক খবর।
গত কয়েক বছরের বর্ষা আগমনের পরিসংখ্যান দেখলে দেখা যায়, ২০২৩ সালে ৮ জুন, ২০২২ সালে ২৯ মে, ২০২১ সালে ৩ জুনের পর এবং ২০২০ সালে ১ জুন কেরলে বর্ষা এসেছিল। ২০১৯ সালে স্বাভাবিক সময়ের প্রায় এক সপ্তাহ পরে ৮ জুন বর্ষা এসেছিল এবং ২০১৮ সালে ২৯ মে বর্ষার আগমন হয়েছিল। এই পরিসংখ্যানের নিরিখে এবছরের পূর্বাভাস সত্যিই যদি ২৭ মে হয়, তবে তা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে দ্রুততম আগমনের একটি হবে।