
যেন একটি শাটলককের পালকবিহীন রাবার খণ্ড আকাশ থেকে তীরের গতিতে নেমে আসছে। গতি কমাতে প্রথমে দুটি, তারপর আরও দুটি প্যারাশ্যুট ঝুপ করে খুলে গেল। হাওয়ায় দোল খেতে খেতে ধীরে ধীরে পৃথিবীর মাটি ছুঁল স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্যাপসুল। গোটা বিশ্ব বিনিদ্র চোখে এই দৃশ্য দেখছিল। সেই দৃশ্যের সাক্ষী ছিলেন নাসার সিনিয়র বিজ্ঞানী, বঙ্গসন্তান গৌতম চট্টোপাধ্যায়ও। কয়েক ঘণ্টা পর যখন ক্যাপসুলের দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস ও আমেরিকান নভোচারী বুচ উইলমোর, তখন শিশুসুলভ আনন্দে ফেটে পড়েন গৌতম। মনে মনে বলেন, “হ্যাঁ, আমরা পেরেছি।”
২৮৬ দিনের কঠিন অভিযান
২০২৪ সালের ৫ জুন মাত্র ৮ দিনের জন্য মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন সুনীতা ও বুচ। কিন্তু মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তাঁদের প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত হয়। ২৮৬ দিন পর অবশেষে তাঁরা পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন। এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত গৌতম চট্টোপাধ্যায় ‘এই সময় অনলাইন’-এর সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে তাঁর অনুভূতি ভাগ করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা খুবই খুশি। আমরা জানতাম ওঁরা সুস্থভাবেই ফিরবেন। তবে মহাকাশ অভিযানে ঝুঁকি সব সময় থাকে। কখন কী ঘটবে, তা আগে থেকে বলা যায় না। তবে শেষ পর্যন্ত ওঁরা নিরাপদে ফিরেছেন, এটা আমাদের জন্য বড় আনন্দের।”
বিজ্ঞানে মানবতার বন্ধন
এই ঘটনা বিশ্বের মানুষের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। ভারতবর্ষও এই গৌরবের অংশীদার। গৌতমের মতে, এই অভিযানের সাফল্য শুধু আমেরিকা বা ভারতের নয়, গোটা মানব সভ্যতার। তিনি বলেন, “এই অভিযান প্রমাণ করল, বিজ্ঞান শুধু একটি দেশের নয়, সারা বিশ্বের মানুষকে এক সূত্রে বেঁধেছে। সুনীতাদের জন্য সবাই উদ্বিগ্ন ছিল। বিজ্ঞান মানবতাকে একত্রিত করার বড় মাধ্যম। এটা ভেবে আমি গর্বিত।”
উৎকণ্ঠা ও আত্মবিশ্বাসের দোলাচল
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সুনীতাদের ফিরিয়ে আনতে বিলম্ব হয়েছিল। একাধিকবার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরও নাসার টিম হাল ছাড়েনি। গৌতম বলেন, “উৎকণ্ঠা তো ছিলই। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। মহাকাশচারীরা যখন যাত্রা করেন, তাঁরা জানেন যে নির্ধারিত সময় বাড়তে পারে। তাই তাঁদের মানসিক প্রস্তুতি থাকে।” তিনি আরও যোগ করেন, এই সাফল্য ভবিষ্যতে আরও নভোচারী ও বিজ্ঞানী তৈরির পথ প্রশস্ত করবে।
গৌতম চট্টোপাধ্যায়: বিজ্ঞানের এক নক্ষত্র
নাসার সিনিয়র বিজ্ঞানী গৌতম চট্টোপাধ্যায় একাধিক গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধানে ‘সাবমিলিমিটার ওয়েভ অ্যাডভান্সড টেকনোলজি’ (সোয়াট) নিয়ে তাঁর গবেষণা উল্লেখযোগ্য। সুনীতার প্রত্যাবর্তনে তাঁর উচ্ছ্বাস শুধু একজন বিজ্ঞানীর নয়, একজন বঙ্গসন্তানেরও।
উপসংহার
সুনীতা ও বুচের ২৮৬ দিনের মহাকাশ অভিযান বিজ্ঞান ও মানবতার জয়গান। এই সাফল্য প্রমাণ করে, প্রযুক্তি ও মানুষের অধ্যবসায় একত্রে অসাধ্যকে সাধন করতে পারে। গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের মতো বিজ্ঞানীরা এই পথকে আরও উজ্জ্বল করে তুলছেন। এই দিনটি বিশ্বের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।