
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের উত্তাপ এখন চরমে। ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ‘অপারেশন রাইজিং’ শুরু করার ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্যে ইরানকে আক্রমণ করেছেন এবং এক কঠোর হুঁশিয়ারি জারি করেছেন। তার কথায়, এই সংঘাতের মাত্রা আরও বাড়বে এবং কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না।
নেতানিয়াহু বলেন, “এটা কেবল শুরু। আরও ধ্বংসাত্মক আক্রমণ হবে। কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না। আমাদের লক্ষ্য হল ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য ইরানের হুমকির অবসান ঘটানো। হুমকি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সামনে এনে নেতানিয়াহু বলেন, “ইরানের বর্বর সরকার কয়েক দশক ধরে প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে ধ্বংস করার হুমকি দিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের কাছাকাছি। কয়েক বছরে ইরান নয়টি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত ইউরেনিয়াম পেয়ে গিয়েছে। এটি কেবল ইসরায়েলের জন্যই নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য গুরুতর হুমকি।” তিনি আরও যোগ করেন, “ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করলে আমাদের দেশ এবং দেশের শিশুদের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলবে।”
নেতানিয়াহু এর আগেও সতর্ক করেছিলেন যে, গত কয়েক মাসে ইরান এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছে যা আগে কখনও নেয়নি – বিশেষ করে পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুতির পদক্ষেপ। তিনি বলেছিলেন, যদি এটি বন্ধ না করা হয়, তাহলে ইরান খুব অল্প সময়ের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে ফেলবে। এই সময়টা এক বছর, কয়েক মাস, অথবা তারও কম হতে পারে। তিনি এটিকে ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য বিপজ্জনক উল্লেখ করে বলেন, “৮০ বছর আগে, ইহুদি জনগণ নাৎসি হলোকস্টের শিকার হয়েছিল। ইহুদিরা ইরানের পরমাণু হামলার শিকার না হয়, আমরা তা নিশ্চিত করতে চাই।”
প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলের নাগরিকদের শান্ত থাকার এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হোম ফ্রন্ট কমান্ডের নির্দেশাবলী অনুসরণ করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে দেন, “এই যুদ্ধ কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের জন্য নয়, বরং লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকবে। প্রতিশোধের মুখোমুখি হতে হবে। প্রস্তুত থাকতে হবে, তবে আশ্বস্ত করছি সেনাবাহিনী সম্পূর্ণরূপে সক্ষম। দেশকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেব।”
মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকট নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যস্থতার প্রস্তাবের মধ্যেই এবার আসরে নামলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার তার পক্ষ থেকে এক কড়া হুঁশিয়ারি এসেছে যে, পরমাণু চুক্তিতে সই করার পরেও যদি ইউরেনিয়াম বন্ধ করা না হয়, তাহলে ইরানকে তার ফল ভুগতে হবে এবং ভয়ানক হামলার মুখে পড়তে হবে। ট্রাম্পের এই মন্তব্য নতুন করে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা শুরু করেছে।
নেতানিয়াহু এবং ট্রাম্পের এই কঠোর অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে আরও এক নতুন এবং বিপজ্জনক মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার এবং আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কায় বিশ্বজুড়ে এখন চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে।