“সবার সামনে ভর্ৎসনা চিকিৎসককে”-মন্ত্রী ক্ষমা না চাইলে ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি ডাক্তারদের

গোয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল (GMCH)-এ এক চিকিৎসককে জনসমক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বজিৎ রানের কড়া তিরস্কারের ঘটনায় সৃষ্ট বিতর্ক থামছে না। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর মন্ত্রী ক্ষমা চাইলেও, জিএমসিএইচ-এর মুখ্য মেডিক্যাল অফিসার (সিএমও) রুদ্রেশ কুট্টিকার দাবি করেছেন, মন্ত্রীকে যেখানে অপমান করেছিলেন, সেই নির্দিষ্ট স্থানে এসে তাকে অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে। এই দাবিতে গোয়া অ্যাসোসিয়েশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টরস (GARD) ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত গত ৭ জুন। অভিযোগ ওঠে, গোয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক চিকিৎসক রোগীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন এবং তার চিকিৎসা করেননি। এই অভিযোগ পেয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিশ্বজিৎ রানে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছান। সেখানে তিনি জনসমক্ষেই সিএমও রুদ্রেশ কুট্টিকারকে তলব করেন এবং কড়া ভাষায় তিরস্কার করে তাকে সাসপেন্ড করেন। সেই সময় সিএমও-র কোনো কথাই কানে তোলেননি মন্ত্রী। পুরো ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি হয়ে মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়, যা তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। বিতর্কের মুখে বিশ্বজিৎ রানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ক্ষমা চান।

তবে মন্ত্রীর এই ক্ষমা চাওয়া যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন ডাক্তাররা। জিএমসিএইচ-এর সিএমও রুদ্রেশ কুট্টিকার নিজের দাবিতে অনড় থেকে জানিয়েছেন, মন্ত্রীকে জনসাধারণের সামনেই ক্ষমা চাইতে হবে। তিনি বলেন, “শুধু আমি নই। সব ডাক্তারই দাবি করেছেন, মন্ত্রী ঘটনাস্থলে এসে ক্ষমা চাইতে হবে। এই গোটা বিষয়টা জনগণের সামনে হওয়া উচিত। ঠিক যেমন, আমার অপমান করার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। ঠিক সেই রকম ভাবে মন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়া উচিত। কারণ, সেদিন আমি খুব অপমানিত হয়েছিলাম। আমি চাই, তিনি যে ক্ষমা চাইছেন, সেটা সবাই জানুক।”

গোয়া অ্যাসোসিয়েশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টরস (GARD)-এর সদস্যরাও এই দাবিতে সরব হয়েছেন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনসমক্ষে রুদ্রেশ কুট্টিকারের কাছে এসে ক্ষমা না চাইলে তারা ধর্মঘটে বসবেন। তাদের দাবি, “আমরা চাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী যেখান থেকে কুট্টিকারকে অপমান করেছেন, সেখানে এসে তিনি যাতে ক্ষমা চান। তিনি যদি আমাদের দাবি মেনে না নেন, তাহলে আমরা ধর্মঘটে বসব।”

গোয়া মেডিক্যাল কলেজের ডিন এসএম বান্দেকর এই বিষয়ে জানিয়েছেন, “রুদ্রেশ কুট্টিকারকে বরখাস্ত করার কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তাকে কোনো ভাবেই বরখাস্ত করা হবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। এর পাশাপাশি যিনি এই ভিডিও বানিয়েছেন, আমরা সেই ব্যক্তিরও খোঁজ চালাচ্ছি।”

এই ঘটনা গোয়ার স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে এক অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করেছে। জনসমক্ষে একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর এমন আচরণ এবং তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে জোর আলোচনা। এখন দেখার বিষয়, ডাক্তারদের এই ‘অন-স্পট’ ক্ষমা চাওয়ার দাবি মেনে মন্ত্রী শেষ পর্যন্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ক্ষমা চান কিনা, এবং এই বিতর্কের অবসান হয় কিনা।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy