
স্বপ্ন যখন আকাশছোঁয়া হয় আর সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য থাকে অটল সংকল্প, তখন জীবনযুদ্ধের প্রতিকূলতাও পথ আটকাতে পারে না। ঠিক এমনই এক অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উত্তরপ্রদেশের গাজীপুরের সুনীল, যিনি দিনে সবজি বিক্রি করে আর রাতে কঠোর অধ্যবসায় করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার এই গল্প আজ কেবল গাজীপুর নয়, গোটা রাজ্যের যুবসমাজকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শেখাচ্ছে।
সকাল-সন্ধ্যা সবজি, রাতে পড়াশোনা: অসাধ্য সাধন
সুনীলের জীবনচক্র শুরু হতো ভোর ৫টা থেকে, গাজীপুরের সেচ বিভাগের ক্রসিংয়ে সবজির দোকানে। সারা দিন কঠোর পরিশ্রম করে রুজি-রোজগার করতেন। কিন্তু তার আসল লড়াই শুরু হতো বিকেলে। দিনের ব্যস্ততা শেষে তিনি ছুটে যেতেন কাছের একটি লাইব্রেরিতে। সেখানে টানা ছয় ঘণ্টা চলত নিবিষ্ট পড়াশোনা। এরপর সন্ধ্যায় আবার দোকানের দায়িত্ব সামলে রাতেও চালিয়ে যেতেন পরীক্ষার প্রস্তুতি। প্রায় ছয় মাস থেকে এক বছর ধরে এই কঠোর রুটিন অনুসরণ করে গেছেন সুনীল, যেখানে বিশ্রাম ছিল এক বিলাসিতা। অবশেষে, তার অদম্য পরিশ্রমের ফল মিলেছে।
প্রেরণা বাবা ও মায়ের সংগ্রাম, শীতের কুয়াশাও হার মেনেছিল
সুনীল জানান, তার বাবার সংগ্রাম এবং পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধই ছিল তার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তিনি বলেন, “শীতকালে যখন গোটা গাজীপুর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকত, তখনও আমি ভোর ৪টের সময় ঘুম থেকে উঠে দৌড়তে বেরোতাম। আমরা ঠান্ডাকে ঠান্ডা মনে করতাম না। তাই কুয়াশা হোক কিংবা কনকনে ঠান্ডা, আমাদের দৌড় কখনও থেমে থাকেনি।” প্রতিদিন সুনীল আরও ৫-৬ জন বন্ধুর সঙ্গে শারীরিক অনুশীলনের জন্য দৌড়াতে যেতেন, যা তার মানসিক শক্তিকেও বাড়িয়ে তুলেছিল।
সুনীলের মা সঙ্গীতা দেবী আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “আমার তিন ছেলেই সবজি বিক্রি করে, কিন্তু সুনীল পড়াশোনায় ভালো ছিল। আমি ওকে জীবনে বড় কিছু করতে বলেছিলাম। আর এর জন্য পড়াশোনা করার কথাও বলেছিলাম।” মায়ের এই কথাগুলিই সুনীলের জীবনের গতিপথ বদলে দিয়েছে।
সাফল্যের মূলমন্ত্র: ধারাবাহিকতা ও সঠিক কৌশল
সুনীল বিশ্বাস করেন, পড়াশোনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। তার কথায়, “যদি কেউ দিনে মাত্র দুই ঘণ্টাও পড়াশোনা করেন, তাহলে কোনো বিরতি না নিয়ে একটানা পড়ে যেতে হবে। এটাই একমাত্র উপায়, যা সাফল্য এনে দিতে পারে।”
উত্তরপ্রদেশ পুলিশ নিয়োগের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সুনীল গণিত, রিজনিং এবং হিন্দি – এই তিনটি বিষয়কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন। তার মতে, এই তিনটি বিষয়ের প্রস্তুতি যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে ভালো নম্বর তোলা খুব একটা কঠিন নয়। সাধারণ বিজ্ঞানের বিষয়ে তিনি বলেন যে, এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে যতই পড়াশোনা করা হোক না কেন, তা কমই মনে হবে; কিন্তু প্রতিদিন পড়া চালিয়ে যাওয়াটাই জরুরি।
পরিবারের অসামান্য অবদান: ত্যাগের ফসল
সুনীলের এই ঈর্ষণীয় সাফল্যের পেছনে রয়েছে তার মা এবং দাদাদের অসামান্য অবদান। তারা কেবল সুনীলকে ঘরের কাজ থেকে অবসর দেননি, বরং তাকে পড়াশোনার জন্য গাজীপুরের বাইরেও পাঠিয়েছিলেন। পরিবারের সদস্যদের এই নিঃস্বার্থ অবদান এবং সুনীলের কঠোর অধ্যবসায়ের ফলেই আজ তিনি এই স্বপ্নের জায়গায় পৌঁছতে পেরেছেন। সুনীলের গল্প প্রমাণ করে, ইচ্ছা থাকলে প্রতিকূলতা জয় করে কিভাবে স্বপ্নকে বাস্তব করা যায়।