“সন্ত্রাসবাদের অবসান না হওয়া পর্যন্ত …?”-ফের পাকিস্তানকে কড়া বার্তা এস জয়শঙ্করের

ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ আলোচনা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে বৃহস্পতিবার নিজেদের অবস্থান ফের স্পষ্ট করে দিলেন কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে পাকিস্তানের উপর চাপ বজায় রেখে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, আলোচনা যদি হয় তবে তার একমাত্র বিষয় হবে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK) এবং সীমান্ত সন্ত্রাস পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতই থাকবে।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিদেশমন্ত্রী বলেন, “সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত রাখা হয়েছে এবং সীমান্ত সন্ত্রাসবাদ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এটি স্থগিত থাকবে।” কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার বিষয়ে তাঁর বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার। তিনি জানান, “কাশ্মীর নিয়ে আলোচনার একমাত্র বিষয় হল পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে অবৈধভাবে দখলকৃত ভারতীয় ভূখণ্ড খালি করা। আমরা সেই আলোচনার জন্য রাজি আছি।” এর মাধ্যমে জয়শঙ্কর বুঝিয়ে দেন যে, কাশ্মীর সমস্যার অন্য কোনও দিক নিয়ে আলোচনা করার আগ্রহ ভারতের নেই।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিদেশমন্ত্রী বলেন, “এটা স্পষ্ট যে কারা গুলিবর্ষণ বন্ধ করতে চেয়েছিল।” এর মাধ্যমে তিনি নাম না করে পাকিস্তানের উপর দায় চাপান।

অতীতের সামরিক পদক্ষেপ, যা ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে উল্লেখিত হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে জয়শঙ্কর বলেন, “জঙ্গি কাঠামো ধ্বংস করে আমরা যে টার্গেট নির্ধারণ করেছিলাম তা অর্জন করেছি।” তিনি জানান, মূল লক্ষ্যগুলি অর্জিত হওয়ায় ভারত যুক্তিসঙ্গত অবস্থান নিয়েছিল। অপারেশনের শুরুতেই পাকিস্তানকে একটি বার্তা পাঠানো হয়েছিল যে ভারত সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামোকে নিশানা করছে, সামরিক বাহিনীকে নয়। সামরিক বাহিনীর কাছে চাইলে সরে দাঁড়ানোর এবং হস্তক্ষেপ না করার বিকল্প ছিল। কিন্তু তারা সেই ‘ভাল পরামর্শ’ মানেনি বলে জয়শঙ্কর মন্তব্য করেন। তিনি যোগ করেন, “১০ মে সকালে তারা খারাপভাবে মার খেয়েছে। স্যাটেলাইট ছবিতেই দেখা যাচ্ছে যে আমরা কতটা ক্ষতি করেছি এবং তারা কতটা কম ক্ষতি করেছে।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি অতীতের ভারতীয় সামরিক পদক্ষেপের কার্যকারিতা তুলে ধরেন।

পাকিস্তানের সঙ্গে ভবিষ্যতে কোনও ধরনের আলাপ-আলোচনা নিয়ে ভারতের অবস্থান কী হবে, সে বিষয়েও বিদেশমন্ত্রী স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তিনি জানিয়ে দেন যে, কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা কেবলমাত্র দ্বিপাক্ষিকভাবেই হবে, তৃতীয় কোনও দেশের হস্তক্ষেপ ভারত মানবে না। তাঁর কথায়, “পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এবং লেনদেন কঠোরভাবে দ্বিপাক্ষিক হবে। এটি বছরের পর বছর ধরে একটি জাতীয় ঐকমত্য। এতে কোনও পরিবর্তন হয়নি।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অবস্থান উল্লেখ করে জয়শঙ্কর বলেন, “প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন যে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা কেবল সন্ত্রাসবাদের উপরেই হবে।” পাকিস্তানের কী করণীয়, সে বিষয়েও স্পষ্ট ধারণা আছে বলে জানান তিনি। “পাকিস্তানের কাছে সন্ত্রাসবাদীদের একটি তালিকা রয়েছে, যাদের হস্তান্তর করা প্রয়োজন এবং তাদের কাঠামো বন্ধ করতে হবে। তারা জানে কী করতে হবে। সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে কী করতে হবে তা নিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। এই আলোচনাগুলিই সম্ভব।”

বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের এই মন্তব্যগুলি পাকিস্তানের প্রতি ভারতের অনড় অবস্থানকেই পুনর্ব্যক্ত করে, যেখানে সন্ত্রাসবাদ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত স্বাভাবিক সম্পর্ক বা বৃহৎ আলোচনার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy