
ডুয়ার্সের লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে অবস্থিত তৃণমূল নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লার পৈতৃক বাড়িতে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দুপুরে আচমকাই তার পৈতৃক বাড়ির পুরোনো কাঠের দো-চালা ঘর থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসেন। দাউ-দাউ করে জ্বলে ওঠে বাড়ির একাংশ, যা প্রাক্তন মন্ত্রীকে গভীরভাবে মর্মাহত করেছে। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, এই ঘটনায় তার ‘খুবই কষ্ট’ হচ্ছে এবং এটি তার জন্য এক ‘বড় ক্ষতি’।
অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত: শর্ট-সার্কিট?
জন বার্লা ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে জানান, “কয়েকদিন আগেই ইলেকট্রিকের পোস্টে আগুন লেগে গিয়েছিল। ওর উপরে বক্স ছিল। তারপর অস্থায়ী একটি বক্স লাগিয়ে তার উপর কাজ করে চলে গিয়েছিল। আজ বোধহয় কোনোভাবে শর্ট-সার্কিট হয়। বৈদ্যুতিক তারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। নীচে সেই সময় বাচ্চারা খেলছিল। সেই তার থেকেই আমার বাড়িতে আগুন লেগে যায়।” তিনি জানান, সঙ্গে সঙ্গেই দমকলে ফোন করা হয়। তবে দমকল আসার আগেই চা বাগানের লোকজন ছুটে আসেন এবং নিজেদের চেষ্টাতেই জল ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তাদের তৎপরতায় আগুন আরও ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।
‘এই ঘর থেকেই সংগঠন শুরু করেছিলাম’: স্মৃতির সরণিতে বার্লা
জন বার্লার কাছে এই বাড়িটি কেবল একটি কাঠামো নয়, বরং তার রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের স্মৃতি বহন করে। শোকাহত কণ্ঠে তিনি বলেন, “এটা আমার পৈত্রিক বাড়ি। অনেকটাই ক্ষতি হয়ে গেল। এই ঘর থেকেই সংগঠন শুরু করেছিলাম। সেই কারণে এই ঘর নষ্ট করিনি। কষ্ট তো হবেই।” তার এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, পোড়া ঘরের প্রতিটি ইঁটে মিশে আছে তার দীর্ঘদিনের সংগ্রাম এবং স্বপ্নের স্মৃতি। যে ঘর থেকে তার রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয়েছিল, সেই ঘরের এই পরিণতি তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে।
ব্যক্তিগত ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক আঘাত
এই অগ্নিকাণ্ড জন বার্লার জন্য কেবল আর্থিক ক্ষতিই নয়, বরং এক গভীর মানসিক আঘাতও বটে। তার রাজনৈতিক জীবনে উত্থান-পতনের সাক্ষী এই পৈতৃক বাড়ি। একসময় এই বাড়িতে বসেই তিনি তার অনুগামীদের নিয়ে সাংগঠনিক কাজ পরিচালনা করতেন। বহু আলোচনা, পরিকল্পনা এবং স্বপ্নের জন্ম হয়েছিল এই ঘরটিতে। সেই ‘সূতিকাগার’ আজ আগুনের করাল গ্রাসে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত। জন বার্লার এই ব্যক্তিগত ক্ষতি এবং তার অনুভূতির প্রকাশ স্থানীয় মানুষের মধ্যেও সহানুভূতি জাগিয়েছে। এই ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল, রাজনীতির উর্ধ্বে উঠেও ব্যক্তিগত জীবনে এমন ঘটনা কতটা অপ্রত্যাশিত এবং যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে।