আফ্রিকার তৃতীয় দেশ হিসেবে এবার দেউলিয়া হয়েছে ইথিওপিয়া। মঙ্গলবার দেশটির একমাত্র আন্তর্জাতিক বন্ডের বিপরীতে ৩৩ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। এর মধ্য দিয়ে দেশটি দেউলিয়া রাষ্ট্রের কাতারে উঠে গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
চলতি মাসের শুরুতে ইথিওপিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় যে, তারা দেউলিয়া হওয়ার দিকে যাচ্ছে। দেশটির সরকার জানায়, করোনাভাইরাস মহামারি এবং ২০২২ সালের নভেম্বরে শেষ হওয়া দুই বছরের গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষিতে গুরুতর আর্থিক চাপের মধ্যে রয়েছে ইথিওপিয়া।
বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত দুটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, ইথিওপিয়া ১০০ কোটি ডলার অর্থ সংগ্রহ করেছিল আন্তর্জাতিক বন্ডের বিপরীতে। পূর্বনির্ধারিত শর্ত অনুসারে গত ১১ ডিসেম্বর এসব বন্ডের বিপরীতে ৩৩ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু তখনো দেশটি সেই অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি। সেই সময়ের সঙ্গে গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে ১৪ দিন যুক্ত হয়। সেই হিসাবে গত ২৫ ডিসেম্বর ছিল অর্থ পরিশোধের শেষ দিন। কিন্তু এই দিনও ইথিওপিয়া সরকার অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়।
ইথিওপিয়ার সরকারি কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি। তবে তারা এর মাধ্যমে আফ্রিকার দুই দেশ জাম্বিয়া ও ঘানার কাতারে নাম লেখাল।
২০২১ সালের শুরুর দিকে পূর্ব আফ্রিকার এই দেশ জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর কাছে প্রথমবারের মতো ঋণের শর্ত শিথিল করার অনুরোধ জানায়।
প্রথমদিকে, ইথিওপিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে সেই উদ্যোগে কিছুটা দেরি হয়। কিন্তু গৃহযুদ্ধ, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে চীনসহ ইথিওপিয়ার সরকারি খাতে বিনিয়োগকারী দেশগুলো দেশটির সঙ্গে ঋণ পরিষেবা স্থগিতের চুক্তি করে।
ইথিওপিয়া পূর্ব আফ্রিকার একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। এর পূর্ণ সরকারি নাম হলো ইথিওপিয়া যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। দেশটি ‘আফ্রিকার শিং’ তথা সোমালি উপদ্বীপ অঞ্চলটিতে অবস্থিত। ইথিওপিয়ার উত্তরে ইরিত্রিয়া, উত্তর–পূর্বে জিবুতি, পূর্বে সোমালিয়া, দক্ষিণে কেনিয়া, পশ্চিমে দক্ষিণ সুদান ও উত্তর-পশ্চিম সীমানায় সুদান অবস্থিত। দেশটির আয়তন প্রায় ১১ লাখ ২৭ হাজার ১২৭ বর্গ কিলোমিটার।
দেশটির জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে দশ কোটি। এটিই আফ্রিকা মহাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনবহুল রাষ্ট্র। প্রথমটি নাইজেরিয়া।
দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম নগরীর নাম আদ্দিস আবাবা। অতীতে আবিসিনিয়া নামে পরিচিত এই দেশটি সমগ্র ইতিহাস জুড়েই বিদেশি পরাশক্তির শাসন থেকে স্বাধীন ছিল, যা দেশটির জাতীয় ঐক্যের অন্যতম ভিত্তি। আধুনিক ইথিওপিয়া রাষ্ট্রটি ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। এখানে দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা আছে। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী সরকার প্রধান।