শুভাংশু শুক্লাকে মহাকাশে পাঠাতে কত খরচ হচ্ছে? জানলে চমকে যাবেন আপনিও

ইতিহাস গড়ার পথে ভারত: শুভাংশু শুক্লা ISS-এ, বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশনের স্বপ্ন!
বেঙ্গালুরু/হিউস্টন, ১০ জুন, ২০২৫ – ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে চলেছে। ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)-এর পথে পাড়ি দিতে চলেছেন, Axiom Space-এর Ax-4 মিশনে। এই ঐতিহাসিক যাত্রার মাধ্যমে তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে ISS-এ পৌঁছানোর গৌরব অর্জন করবেন। এর আগে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনীতা উইলিয়ামস একাধিকবার ISS ভ্রমণ করলেও, শুভাংশু শুক্লা হলেন প্রথম ভারতীয় নাগরিক যিনি এই মাইলফলক স্পর্শ করবেন।

ভারত-মার্কিন যৌথ উদ্যোগ: উচ্চাকাঙ্ক্ষী মিশন ও বিপুল বিনিয়োগ
Ax-4 মিশন ভারত এবং আমেরিকার এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী যৌথ উদ্যোগ। এই মিশনে ভারতকেও উল্লেখযোগ্য অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। Axiom Space জানিয়েছে, এই মিশনের মোট খরচ ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৩৮ কোটি টাকা। যদিও Blue Origin বা Virgin Galactic-এর মতো সংস্থার তুলনায় এই খরচ অনেক বেশি মনে হতে পারে, তবে Axiom Space এই মিশনকে কেবল একটি মহাকাশ যাত্রা হিসেবে দেখছে না, বরং এটিকে ‘এক বছরের মহাকাশ প্রশিক্ষণ অভিযান’ হিসেবে অভিহিত করছে।

মহাকাশচারী প্রশিক্ষণ: এক বছরব্যাপী কঠোর প্রস্তুতি
এই বিপুল অঙ্কের অর্থের মধ্যে কেবল রকেটে করে ISS-এ যাওয়ার খরচই অন্তর্ভুক্ত নয়। শুভাংশু শুক্লার জন্য ৮ থেকে ১২ মাসব্যাপী এক নিবিড় প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ NASA, SpaceX, ESA (ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি) এবং JAXA (জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি)-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হবে। মোট ৭০০ থেকে ১,০০০ ঘণ্টার এই প্রশিক্ষণে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, ISS-এর কার্যপদ্ধতি এবং লঞ্চ অপারেশন সংক্রান্ত সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে শুভাংশুকে প্রস্তুত করা হবে।

ISS-এ বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
Ax-4 মিশন প্রায় দু’সপ্তাহ স্থায়ী হবে, এই সময়ে মহাকাশচারীরা ISS-এ শূন্য অভিকর্ষে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজ করবেন। এই মিশনে শুধু ভারতই নয়, পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির সঙ্গেও সরকারি স্তরে চুক্তি রয়েছে। এই দেশগুলির নিজস্ব মহাকাশ প্রোগ্রাম ততটা উন্নত না হওয়ায়, খরচ সাশ্রয়ের জন্য তারা Axiom Space-কে এই চুক্তি দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মহাকাশ অভিযানের জন্য যে বিপুল খরচ হয়, তার তুলনায় ৭০ মিলিয়ন ডলার খুব বেশি নয়।

ভবিষ্যতের বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন: Axiom Space-এর স্বপ্ন
Axiom Space কেবল মহাকাশ ফ্লাইটের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে না। তাদের এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে – বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন তৈরি করা। এই স্টেশনটি তৈরি করে তারা বিভিন্ন দেশকে গবেষণার কাজে ভাড়া দিতে চায়, যা বর্তমান ISS-এর একটি বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। এটি মহাকাশ গবেষণায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শুভাংশু শুক্লার এই অভিযান ভারতের জন্য শুধু বৈজ্ঞানিক গবেষণার দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ মঞ্চে ভারতের অবস্থানকেও আরও শক্তিশালী করবে। এই মিশনের মাধ্যমে ভারত মহাকাশ গবেষণায় তার সক্ষমতা প্রমাণ করবে এবং ভবিষ্যতের বাণিজ্যিক মহাকাশ অভিযানের জন্য নতুন পথ খুলে দেবে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy