
গড়জঙ্গলে শিক্ষকের অবসরে বন্ধ শিশু শিক্ষাকেন্দ্র, বিপাকে পড়ুয়ারা
পশ্চিম বর্ধমান, আদুরিয়া: পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসার গড়জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত আদুরিয়া গ্রামে একমাত্র শিক্ষকের অবসর নেওয়ার জেরে বন্ধ হয়ে গেছে স্থানীয় শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। এই ঘটনায় চরম বিপাকে পড়েছেন ওই কেন্দ্রের ১৫ জন পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকরা। বন্ধ হয়ে যাওয়া এই শিক্ষাকেন্দ্রের ফলে এখন শিশুদের পড়তে হচ্ছে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরের রক্ষিতপুর গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে স্কুলে যাওয়া শিশুদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। ফলে অভিভাবকরা শিশু শিক্ষাকেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার দাবি তুলেছেন।
জঙ্গলের মাঝে আদুরিয়া গ্রাম
কাঁকসার মলানদিঘী গ্রাম পঞ্চায়েতের একেবারে শেষ প্রান্তে অবস্থিত আদুরিয়া গ্রাম। গড়জঙ্গলের ঘন সবুজের মধ্যে এই ছোট্ট গ্রামটি বাস করে। এখানে দলিত সম্প্রদায়ের শিশুদের শিক্ষার জন্য ছিল একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র। কিন্তু মাসখানেক আগে ওই কেন্দ্রের একমাত্র শিক্ষক অবসর নেওয়ায় শিক্ষকের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় কেন্দ্রটির দরজা। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ।
ছয় কিলোমিটার দূরে স্কুল, জঙ্গলে হিংস্র জন্তুর ভয়
শিশু শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার পর পড়ুয়াদের ভর্তি করা হয়েছে মলানদিঘী গ্রাম পঞ্চায়েতের রক্ষিতপুর গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু আদুরিয়া থেকে এই স্কুলের দূরত্ব প্রায় ছয় কিলোমিটার। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এই পথ পেরিয়ে যেতে হয় বলে শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। তাঁদের আশঙ্কা, জঙ্গলে হিংস্র জীবজন্তুর আক্রমণের শিকার হতে পারে শিশুরা।
অভিভাবকদের অভিযোগ
অভিভাবকদের অভিযোগ, গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই কাজ ছেড়ে প্রতিদিন শিশুদের এত দূর স্কুলে পৌঁছে দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে শিশুদের পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। সুমিত্রা রায় নামে এক অভিভাবক বলেন, “শিক্ষক অবসর নেওয়ার পর থেকে শিশু শিক্ষাকেন্দ্র বন্ধ। আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছি। ছয় কিলোমিটার দূরে স্কুলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। জঙ্গলে জন্তু আছে, বাচ্চাদের একা ছাড়াও যায় না।” একই দাবি তুলেছেন রাজু সোরেন ও সনমনী সোরেন। তাঁরা গ্রামের শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষক নিয়োগ করে পঠনপাঠন শুরু করার আর্জি জানিয়েছেন।
পঞ্চায়েত মন্ত্রীর আশ্বাস
রাজ্যের পঞ্চায়েত, গ্রামোন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার এই বিষয়ে বলেন, “আমরা অভিযোগ শুনেছি। কিন্তু ওই শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে মাত্র ১৫ জন পড়ুয়া ছিল। এত কম সংখ্যক শিশু নিয়ে কীভাবে স্কুল চালানো যায়! তবুও আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” তিনি অভিভাবকদের সমস্যার কথা বিবেচনা করে সমাধানের পথ খুঁজবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
বিজেপির কটাক্ষ
এদিকে, এই ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার বিজেপির সহ-সভাপতি রমন শর্মা বলেন, “শিক্ষকের অভাবে স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে, এটা ভাবা যায়! এই সরকার যতদিন থাকবে, ততদিন বাংলার শিক্ষার এই দুরবস্থা চলবে।” তিনি রাজ্য সরকারের উপর তীব্র কটাক্ষ করে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
অভিভাবকদের দাবি
অভিভাবকরা রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী ও কাঁকসার বিডিওর কাছে শিশু শিক্ষাকেন্দ্র পুনরায় খোলার দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের একটাই আকুতি—গ্রামের শিশুদের শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা না হোক। এখন সবার নজর সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।