“শরীর সঙ্গ দিচ্ছে না”-বুমরার কথায় ধরা পড়লো অবসরের ইঙ্গিত?

ক্রিকেট মাঠে তাঁর দুরন্ত গতি, নিখুঁত ইয়র্কার আর বিধ্বংসী সুইংয়ে তাবড় ব্যাটসম্যানদের ঘুম কেড়ে নেওয়া জসপ্রীত বুমরাহ। কিন্তু বাইশ গজের বাইরে, মাইক্রোফোনের সামনে তিনি এবার তুলে ধরলেন এক অন্য বুমরাহকে – যিনি জানেন, সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না, এমনকি বুমরাহর মতো সুপারস্টারের জন্যও নয়। ইংল্যান্ড সফরের আগে ভারতীয় পেস আক্রমণের নতুন কাণ্ডারি হিসেবে যখন তাঁর নাম আলোচিত হচ্ছে, তখনই এক পডকাস্টে তিনি জানিয়ে দিলেন, হয়তো খুব বেশিদিন বাকি নেই তাঁর ক্রিকেট জীবনের।

বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মার মতো কিংবদন্তিদের টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের পর, ভারতীয় ক্রিকেটের হাল এখন বুমরাহর অভিজ্ঞ হাতের ওপর। আসন্ন ইংল্যান্ড সফরে তাঁর নেতৃত্বাধীন পেস আক্রমণই হতে চলেছে ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। কিন্তু এই গুরুদায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার আগেই বুমরাহ যেন ভবিষ্যৎ নিয়ে একধরনের বাস্তববাদী মনোভাব প্রকাশ করলেন। মাইকেল ক্লার্কের ‘Beyond23 Cricket’ পডকাস্টে বুমরাহ যা বললেন, তা একাধারে তাঁর সততা এবং খেলার প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার প্রমাণ।

ইংল্যান্ডে বোলিং করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে বুমরাহ বরাবরই উচ্ছ্বসিত। তাঁর কথায়, “ইংল্যান্ডে খেলা এক ভিন্ন ধরণের চ্যালেঞ্জ। আমি ডিউকস বল দিয়ে বোলিং করতে ভালোবাসি। সেখানকার আবহাওয়া, সুইং কন্ডিশন এবং বল নরম হয়ে গেলেও বল করা সহজ নয়। এজন্যই আমি ইংল্যান্ডে খেলতে সবসময় উত্তেজিত।” ইংল্যান্ডের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং স্টাইল নিয়েও তাঁর কৌতূহল বর্তমান। “তারা (ইংল্যান্ড) ভিন্ন স্টাইলে খেলছে, যা আমি পুরোপুরি বুঝতে পারছি না। বোলিং ইউনিট হিসেবে আমরা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। যখন ব্যাটসম্যানরা খুব আক্রমণাত্মক খেলে, তখন শুরুতেই উইকেট তুলে নিতে হবে,” তাঁর মন্তব্য।

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল তাঁর শারীরিক সক্ষমতা এবং ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি। তিনি মেনে নিয়েছেন যে, একজন ক্রিকেটারের পক্ষে সব ফরম্যাটে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা সহজ নয়। “কোনও খেলোয়াড়ের পক্ষেই সব ফরম্যাটে ধারাবাহিকভাবে খেলা সহজ নয়। আমি অনেক দিন ধরে এটা করে আসছি। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময় পরে তোমাকে বুঝতে হবে তোমার শরীর কোন দিকে যাচ্ছে এবং কোন টুর্নামেন্টটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অতএব, তোমাকে তোমার শরীরকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করতে হবে,” স্পষ্ট জানালেন বুমরাহ।

ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা একবারে দিনের হিসেবে। কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তাঁর নেই। “একজন ক্রিকেটার হিসেবে আমি কখনই কিছু ত্যাগ করতে চাই না এবং সর্বদা এগিয়ে যেতে চাই। আমি এই মুহূর্তে ভালো আছি, কিন্তু আমি দীর্ঘমেয়াদী কোন পরিকল্পনা করি না। আমি প্রতিটি দিন এক এক করে দেখি। এখন পর্যন্ত যাত্রা ভালো হয়েছে,” বুমরাহ বলেন।

তাঁর বক্তব্যের সবচেয়ে আবেগঘন অংশটি ছিল ক্রিকেট থেকে তাঁর বিদায় নেওয়ার মুহূর্তটি নিয়ে। “যেদিন আমার মনে হবে আবেগ আর নেই, আমি চেষ্টা করতে পারছি না, আমার শরীর আমাকে সমর্থন করছে না, তখন আমি আমার সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব,” বুমরাহ বলেন। “কিন্তু আপাতত আমি ঠিক আছি।”

এই বক্তব্য একদিকে যেমন বুমরাহর পেশাদারিত্বের প্রমাণ, তেমনি তাঁর শারীরিক অবস্থার প্রতি তাঁর সচেতনতাকেও তুলে ধরে। আধুনিক ক্রিকেটের তীব্র প্রতিযোগিতার মাঝে একজন ফাস্ট বোলারের জন্য ফিটনেস ধরে রাখা যে কতটা কঠিন, তা বুমরাহর এই কথাগুলোই প্রমাণ করে। ইংল্যান্ড সফরের আগে বুমরাহর এই অকপট স্বীকারোক্তি ভারতীয় ক্রিকেট মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তবে আপাতত, তাঁর চোখ ইংল্যান্ডের সবুজ পিচে, ডিউকস বল হাতে নতুন ইতিহাস রচনার দিকে। আর তাঁর ভক্তরা আশা করছেন, ‘বুড়ো হাড়ের’ এই ভাবনা আরও কিছুদিন মুলতুবি রেখে তিনি তাঁর জাদু দেখিয়ে যাবেন বাইশ গজে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy