লন্ডনজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে আগুন, ৪০ ডিগ্রি ছাড়াল তাপমাত্রা

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে প্রথমবারের মতো তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রেকর্ড ভাঙা এই তাপপ্রবাহের মধ্যে সেখানে বিভিন্ন স্থানে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।

এতে করে শহরটিতে বড় ঘটনা ঘটেছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (২০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মঙ্গলবার বিকেল থেকে অন্তত নয়টি জায়গায় ছড়িয়ে পড়া আগুন নিয়ন্ত্রণে ৪০০ জনেরও বেশি দমকলকর্মী কাজ করছেন। এসব ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা এবং বাড়িঘর ধ্বংস হওয়ার বিস্তারিত তথ্য এখনও জানা যায়নি।

লন্ডন ফায়ার ব্রিগেডের (এলএফবি) সহকারী কমিশনার জোনাথন স্মিথ বলেছেন, চলমান ঘটনায় হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির একটি ‘সঠিক ছবি’ দেওয়ার আগে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করতে হবে।

তিনি বলছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখা নিশ্চিত করার জন্য মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত সময়টি ‘খুব গুরুত্বপূর্ণ’ হবে।

লন্ডন অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বলেছে, আগুন ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট কতজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে তা জানতে বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

বিবিসি বলছে, পূর্ব লন্ডনের ওয়েনিংটনের বহু বাড়ি, ঘাসে সৃষ্ট আগুন অন্য সম্পত্তিতে ছড়িয়ে পড়ার পরে এবং বেশ কয়েকটি আগুনে পুড়ে যাওয়ার পরে সেসব বাড়ি খালি করা হয়। এছাড়া দাগেনহামে অগ্নিকাণ্ডের পর দু’জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড মঙ্গলবার বলেছে, শহরের বিভিন্ন স্থানে কয়েক ডজন অগ্নিনির্বাপক ইঞ্জিন মোতায়েন করা হয়েছে। পূর্ব লন্ডনের গাছপালায় লাগা আগুন নেভাতে অন্তত ৩০টি ইঞ্জিন পাঠানো হয়েছে। টেলিভিশন ফুটেজেও বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরে গেছে বলে দেখা গেছে।

দমকলকর্মীরা বাসিন্দাদের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছেন। যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে বাসিন্দাদের যোগাযোগ করার আহ্বান জানিয়েছে ফায়ার ব্রিগেড।

এদিকে বিদ্যমান এই পরিস্থিতিকে জটিল বলে আখ্যা দিয়ে মঙ্গল ও বুধবার পার্ক, ব্যক্তিগত বাগান এমনকি আঙিনায় বারবিকিউ করা থেকে লোকজনকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র সাদিক খান।

যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ইতিহাসে এই প্রথম ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা দেখল ব্রিটেনবাসী। এর আগে দেশটিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৯ সালে ব্রিটেনের কেমব্রিজ শহরে এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের ফলে সৃষ্ট আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।

ইউরোপের অধিকাংশ দেশের মতো শীতল জলবায়ুর দেশ যুক্তরাজ্যের জনজীবন চলমান এ তাপদাহে স্বাভাবিকভাবেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে ট্রেন পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে, দেশটির বিভিন্ন শহরের ব্যস্ত জনসমাগমপূর্ণ স্থানগুলো গত তিন-চার দিন ধরে ফাঁকা। বিভিন্ন চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ তাদের পশু-পাখিদের তাপের আঁচ থেকে মুক্ত রাখতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে।

খাবার ও কনফেকশনারির দোকানগুলোতে আইসক্রিম ও ঠান্ডা কোমলপানীয়ের দাম বেড়ে গেছে। ফ্যান ও এসির চাহিদা বাড়ছে ব্যাপকভাবে। ইতোমধ্যে দেশটির পার্লামেন্টের এমপি, সরকারি অফিসের কর্মকর্তাদের কোট বা জ্যাকেট পরিধান না করার পরামর্শ দিয়েছে ব্রিটেনের সরকার।

ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাজ্যের যাতায়াত ব্যবস্থাও মূলত রেল ও মেট্রোট্রেন নির্ভর। কিন্তু গত কয়েকদিনের তাপদাহে যুক্তরাজ্যের রেল লাইনগুলো বেঁকে যাওয়ায় রেল পরিষেবা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে দেশটির সরকার।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy