
একের পর এক দুর্ঘটনা নিয়ে সোমবার রাজ্য বিধানসভায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সত্যি কথা শোনার সাহস নেই। রোজ রোজ দুর্ঘটনা ঘটছে দেশ জুড়ে। চারিদিকে মৃত্যু মিছিল। মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারে না! মুখ্যমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। তাও দেখছি দেখব বলে সুরাহা হয়নি।” মোদি সরকারকে সরাসরি ‘চোরদের সরকার’ বলেও কটাক্ষ করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় বঞ্চনা ও ‘মৃত্যু মিছিল’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণ
বিধানসভায় কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রসঙ্গ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আজ সারা ভারতবর্ষ জুড়ে মৃত্যু মিছিল চলছে লজ্জা করে না? চোরেদের সরকার, রোজ মানুষের মৃত্যু মিছিল তাও লজ্জা করে না।” তাঁর এই মন্তব্য বিধানসভায় তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। তিনি অভিযোগ করেন যে, কেন্দ্র রাজ্য থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করলেও বাংলাকে বঞ্চনা করছে এবং ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে, যদিও সমস্ত তথ্য দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও দাবি করেন যে, অন্যান্য রাজ্যে এই সমস্যা থাকলেও তারা টাকা পাচ্ছে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত হচ্ছে।
রাজ্যে পথ দুর্ঘটনা কমার দাবি, পরিসংখ্যান তুলে ধরলেন পরিবহণ মন্ত্রী
এদিকে, একই দিনে রাজ্য সরকার পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা কমার বিষয়ে একটি বড় দাবি জানিয়েছে। বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের প্রশ্নের উত্তরে পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বিধানসভায় পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন যে, রাজ্যে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা ক্রমশ কমছে। তিনি জানান, ২০১৫ সালে যেখানে ১৭ হাজারের বেশি পথ দুর্ঘটনা হয়েছিল, বর্তমানে তা ১৩ হাজারের নিচে নেমে এসেছে, যা বেশ আশাব্যঞ্জক।
মন্ত্রী আরও বলেন, “তবে একটাও দুর্ঘটনা কাম্য নয়।” তাই রাজ্যে ‘স্পিড ম্যানেজমেন্ট পলিসি’ আনা হয়েছে এবং কোন রাস্তায় কত গতিতে গাড়ি চলতে পারবে, তা নিয়ে রাজ্য জুড়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
কলকাতায় বাস ট্র্যাকিং ও ক্ষতিপূরণ
কলকাতায় বাসের রেষারেষির কারণে দুর্ঘটনা কমাতে এয়ারপোর্ট থেকে শহরমুখী ১০টি রাস্তায় ‘অ্যাপ মারফত ট্র্যাকিং’ ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে বলেও মন্ত্রী জানান। এর ফলে কোন বাস কত গতিতে চলছে, তা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে রাজ্য সরকার ব্যক্তির পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়। এই খাতে ইতিমধ্যেই প্রায় ১৯০০ আবেদন জমা পড়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ এবং পরিবহণ মন্ত্রীর পথ দুর্ঘটনা কমার দাবি, উভয়ই বিধানসভার অধিবেশনকে উত্তপ্ত করে তোলে এবং রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দেয়।