
লোকসভা নির্বাচনের পর প্রথম জনসভা থেকেই সুর চড়ালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ডায়মন্ড হারবারে তাঁর ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’ রিপোর্ট কার্ড পেশের পাশাপাশি, বিজেপিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন রাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নিয়ে। বিজেপিশাসিত একটি রাজ্যেও যদি ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’-এর মতো পরিষেবা চালু করা হয়, তাহলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন – এমন বিস্ফোরক ঘোষণা করলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
‘নিঃশব্দ বিপ্লব’ ও কাজের খতিয়ান
সাতগাছিয়ার সভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সংসদীয় এলাকার উন্নয়নের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব সম্বলিত ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’ শীর্ষক রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করেন। তিনি দাবি করেন, “ডায়মন্ড হারবারে কত কাজ করেছি, সব হিসেব দিয়েছি। তৃণমূলের সঙ্গে কুৎসার লড়াই না করে কাজের পরিসংখ্যান দিন। বিরোধী দলের সাংসদরাও রিপোর্ট কার্ড পেশ করুন।” ‘ডায়মন্ড হারবার মডেল’ নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের জবাব দিয়ে তিনি বলেন, গত ১১ বছরে তাঁর সংসদীয় এলাকায় ৬ হাজার কোটির কাজ হয়েছে।
‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নিয়ে সরাসরি চ্যালেঞ্জ
এদিনের সভার মূল আকর্ষণ ছিল ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নিয়ে অভিষেকের বিজেপিকে দেওয়া চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, “বিজেপির নেতারা বলেছেন, বাংলায় ক্ষমতায় এলে ৩০০০ টাকা করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেব। বিজেপি এবং এনডিএ-র সরকার কমপক্ষে এখনও ১০-১৫টা রাজ্যে রয়েছে। অসমে বিজেপি সরকার, ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার, ওড়িশায় বিজেপি সরকার, মধ্যপ্রদেশে বিজেপি সরকার, ছত্তীসগঢ়ে বিজেপি সরকার, অরুণাচল প্রদেশে বিজেপি সরকার, রাজস্থানে বিজেপি সরকার, বিহারে বিজেপি সরকার, মেঘালয়ে এনডিএ সরকার।”
এরপর তিনি সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “আমি বলছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২ কোটি ২০ লক্ষ মায়েদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিচ্ছে, একজনও বাকি নেই। বিজেপি বলছে ৩০০০ করে দেব। আমি বলছি অর্ধেক করো। ১৫০০।… বিজেপি যদি একটা রাজ্যে করে দেখাতে পারে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতি ছেড়ে দেবে। এত বড় কথা বলে দিয়ে গেলাম। একটা রাজ্যে করে দেখাক।” তাঁর এই বক্তব্য জনসভার ভিড়ে তুমুল হাততালি কুড়িয়েছে।
বিজেপি ও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি অভিষেক কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, “ভাবছেন ED-CBI লাগিয়ে অভিষেককে আটকাবেন। দিল্লির নেতাদের ধরে রাজনীতি করেন। গুজরাতের নেতাদের খুশি করতে মেরুদণ্ড বিক্রি করে দিয়েছেন বঙ্গ বিজেপি নেতারা।” পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের বলে নিজের আগের মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “বিজেপির কোনও নেতার ক্ষমতা আছে? গরিব মানুষের টাকা কারা আটকে রেখেছে? প্রতিশোধের রাজনীতি করছে বিজেপি। মানুষ চাইলে ২ সেকেন্ডে অহঙ্কার ভেঙে চূর্ণ হয়ে যাবে।”
মহেশতলার ঘটনা নিয়ে বিজেপির ‘লাশের রাজনীতি’র অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “মমতা সরকার চাকরি দিলে আটকাতে হবে, বাংলার টাকা আটকাতে হবে। যিনি টাকা নিয়েছেন এবং টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, দু-জনই সমান দোষী। আপনি পুরো প্যানেল বাতিল করে দিলেন। বিচারপতির বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে, তার মানে গোটা বিচারব্যবস্থা তো দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। দুর্নীতি করল কয়েকজন, আর সবার প্যানেল বাতিল হল।”
দিঘার জগন্নাথ মন্দিরকে বিজেপি ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করছে বলেও অভিযোগ করেন অভিষেক। পহেলগাঁও হামলায় আইবি প্রধানের ব্যর্থতা সত্ত্বেও তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধির তীব্র সমালোচনা করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “আর জি কর কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইলে, কেন পহেলগাঁও কাণ্ডে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হবে না? কেন মোদি-শাহের পদত্যাগ দাবি করা হবে না?”
বাংলাকে ছোট করতে বাংলাদেশের উদাহরণ দেওয়া নিয়েও বিজেপিকে আক্রমণ করেন তিনি। সবশেষে, অভিষেক বলেন, “বাংলার ১ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল, জবাব দাও বিজেপি সরকার।”
অভিষেকের এই আক্রমণাত্মক বক্তব্য এবং সরাসরি চ্যালেঞ্জ আগামী দিনে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।