রাস্তায় রাস্তায় দাঙ্গা-আগুন-লুঠপাট, জ্বলছে আমেরিকার এই শহর, জেনেনিন কেন এই পরিস্থিতি?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে লস অ্যাঞ্জেলেসে তীব্র বিক্ষোভ ও অশান্তি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। পরিস্থিতি সামলাতে ইতিমধ্যেই ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছিল, এবার আরও ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ডের পাশাপাশি প্রায় ৭০০ মেরিনবাহিনীকে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা শহরের উত্তেজনাকে এক নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।

২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বেআইনি অভিবাসীদের নির্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল প্রতিদিন ৩ হাজার বেআইনি অভিবাসীকে গ্রেফতার করে বিতাড়িত করা। আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্ত বন্ধ করাও ছিল তার অন্যতম লক্ষ্য। অবৈধ অভিবাসীদের রুখতে ট্রাম্প কঠোর পদক্ষেপের কথা আগেই জানিয়েছিলেন, যার মধ্যে ছিল কর্মস্থল বা আদালত চত্বরের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় অভিযান চালানো। ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করেছেন যে, ডেমোক্র্যাটিক প্রদেশ ক্যালিফোর্নিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়া হয়, যা দেশের সুরক্ষার জন্য বিপজ্জনক।

কেন অশান্ত লস অ্যাঞ্জেলেস?
অভিবাসন দমন এজেন্সি (ICE) সূত্রে খবর, গত শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি কর্মস্থলে অভিযান চালিয়ে ৪৪ জন বেআইনি অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়। একই দিনে গ্রেটার এলএ-তেও আরও ৭৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এই অভিযান ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতির অংশ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এর পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে লস অ্যাঞ্জেলেস। ঘটনার প্রতিবাদে বৈধ নথি না থাকায় অভিযুক্ত অভিবাসীরা এবং তাদের সমর্থকরা পথে নামেন।

ফেডারেল ডিটেনশন সেন্টারের সামনে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী জড়ো হন। হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন এবং ধৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু হয়। সেখানে পুলিশ বাধা দিতেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যায়। পুলিশের অভিযোগ, উন্মত্ত জনতা তাদের দিকে ইট ছুড়তে শুরু করে। একাধিক গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন দোকানে অবাধে লুটপাট চলে। পাল্টা বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, বিনা প্ররোচনাতেই নিরস্ত্র জনতার উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ এবং টিয়ার গ্যাস ছোড়ে।

অভিযানের পর, লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ফেডারেল ভবনটি বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, কারণ সন্দেহ করা হয় যে ওই ভবনেই ধৃতদের রাখা হয়েছে। শনিবারও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল, যার জেরে ট্রাম্প প্রশাসন লস অ্যাঞ্জেলেস এলাকায় ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন করেন।

রাজনৈতিক বাগযুদ্ধ: ডেমোক্র্যাট বনাম রিপাবলিকান
উল্লেখ্য, লস অ্যাঞ্জেলেস ক্যালিফোর্নিয়ার একটি শহর। ট্রাম্প একজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট হলেও, লস অ্যাঞ্জেলেসে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ একজন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির গভর্নর, গ্যাভিন নিউসম। গভর্নর নিউসম ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, “হিংসায় উস্কানি দেওয়া, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, বিরোধীদের গ্রেফতার করা কোনো প্রেসিডেন্টের কাজ নয়, স্বৈরাচারী শাসকের কাজ।”

অন্যদিকে, রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প বিক্ষোভকারীদের “হিংসাত্মক, বিদ্রোহী জনতা” বলে অভিহিত করেছেন। এই পরিস্থিতিতে লস অ্যাঞ্জেলেসের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে মেরিনবাহিনীর মোতায়েন এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ, যা ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থানেরই ইঙ্গিত দেয়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy