সোমবার বিকেল পাঁচটায় শিক্ষক নিয়োগের আবেদনপত্র গ্রহণের জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) পোর্টাল খোলার কথা থাকলেও, রাত ন’টা পর্যন্তও তার দেখা মেলেনি। এই বিলম্বের পেছনে কোনো সরকারি ব্যাখ্যা না থাকলেও, একটি সূত্র জানিয়েছে, লাগাতার ঘেরাও বিক্ষোভের জেরেই নাকি কমিশনের আধিকারিকরা কাজ করতে পারেননি, যার ফলে পোর্টাল নির্ধারিত সময়ে খোলা যায়নি।
একদিকে যখন পোর্টাল খোলেননি, অন্যদিকে নিজেদের দাবিতে অনড় রয়েছেন চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা। সল্টলেকের বিকাশ ভবনের উল্টো দিকের অনশন মঞ্চ থেকে একদল চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়েছেন। সেই চিঠিতে তাঁরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, কেন তাঁরা আর একবার পরীক্ষায় বসতে নারাজ। তাঁদের যুক্তি, তাঁরা ইতিমধ্যেই নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন এবং কোনো দুর্নীতি করে চাকরি পাননি, তাই নতুন করে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে চান না। এই বিষয়ে অবশ্য সরকারি মহলের কোনো বক্তব্য এখনো সামনে আসেনি।
এদিকে, আর একটি দল এদিন সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মিছিল করে বিধানসভা অভিযান শুরু করে। তবে মাঝপথেই পুলিশ তাঁদের আটকায়।
গত চার দিন ধরে বিকাশ ভবনের উল্টো দিকের ধর্না মঞ্চে অনশন করছেন চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা। রবিবারই অনশনের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন মোট ছয়জন, যাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। সোমবারও নতুন করে আরও চারজন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রবিবার ভর্তি হওয়া কয়েকজন অবশ্য ইতিমধ্যে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা চিন্ময় মণ্ডলও এদিন এনআরএস থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তবে অনশন চলছেই। এদিন নতুন করে আরও পাঁচজন শিক্ষক অনশনে বসেছেন।
মিছিল করে বিকাশ ভবনে গিয়ে তাঁরা খামে ভরা কয়েকশো চিঠি শিক্ষামন্ত্রী ও এসএসসি চেয়ারম্যানকে পাঠান।
সোমবার এসএসসি ২০১৬-এর প্যানেলে থাকা ‘যোগ্য’ শিক্ষক-শিক্ষিকা-শিক্ষাকর্মী, যোগ্য ওয়েটিং ও ‘নট-কলড-ফর ভেরিফিকেশন’ এবং অনশনকারীদের তরফে বিধানসভা অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে মিছিল রানি রাসমণি রোডে পৌঁছতেই পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। পুলিশের তরফে জানানো হয়, হঠাৎ করে বিধানসভায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না।
যদিও ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী অনশন মঞ্চ’-এর আন্দোলনকারীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থাকেন। তাঁরা বিধানসভায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব এবং স্পিকারের সঙ্গে দেখা করতে চান। এর পরই পুলিশের তরফে জানানো হয়, বিধানসভায় ক্যাবিনেট বৈঠক চলছে, এই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা সম্ভব নয়।
পরে পুলিশের তরফে চারজন প্রতিনিধিকে বিধানসভায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের জানানো হয়, স্পিকার তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু বিধানসভার গেটে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন স্পিকারের অফিস বন্ধ। পরে তাঁরা স্পিকারের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়ে নেন। আজ, মঙ্গলবার তাঁদের ডাকা হবে।
এদিকে, OBC তালিকা নিয়ে ফের জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই তালিকা নিয়ে হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের হয়েছে, যেখানে স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাঙ্গনে এক নজিরবিহীন অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। কখন এই জটিলতার জট খুলবে, তা বলা মুশকিল।
