
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিদর্শনের ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই পুড়ে যাওয়া খিদিরপুর মার্কেটে পৌঁছালেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্গে ছিলেন বিজেপি নেতা রাকেশ সিং এবং অর্জুন সিং। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সামনে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু এই অগ্নিকাণ্ডকে নিছক দুর্ঘটনা মানতে নারাজ। খিদিরপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বললেন, “আমি জমি রক্ষা আন্দোলনে ডক্টরেট।” বললেন, “রাত ১টায় আগুন, ভোর চারটেয় কেন দমকল? প্ল্যানিংটা বুঝছেন তো? ”
রবিবার রাতের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পিছনে কোনও দূরভিসন্ধি থাকতে পারে বলে জোরালো ইঙ্গিত দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তিনি পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যদি তাঁরা হকের দাবিতে আন্দোলনে নামেন, তবে বিজেপি তাঁদের সঙ্গেই থাকবে।
প্রসঙ্গত, সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ১ লক্ষ টাকা এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের ৫০ হাজার টাকা করে কাঁচামাল কেনার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই সঙ্গে তাদের জন্য বিকল্প জায়গায় আপৎকালীন দোকান করে দেওয়ার কথাও বলেন। তবে এই আশ্বাসে ব্যবসায়ীদের একাংশ সন্তুষ্ট হতে পারেননি এবং তারা ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। শুভেন্দু সেই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে বলেন, “আমরা সবাই একসঙ্গে আপনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে শামিল হতে প্রস্তুত। প্রশাসন যদি ঘর-দোকান ভাঙতে আসে, আপনারা ভাঙতে দেবেন না।” রাতের গভীরে আগুন লাগার পরও কেন দমকল দেরিতে পৌঁছল, সেই প্রশ্ন তুলে শুভেন্দু বোঝাতে চান, এই দেরির পিছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শুভেন্দুর এই প্রশ্ন যথেষ্টই ইঙ্গিতপূর্ণ।
শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার: “কোনো ঝান্ডা নয়, কোনো রাজনৈতিক দল নয়, হকের দাবিতে লড়াই হবে একসঙ্গে।” তার মন্তব্যে এক তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত ছিল – “বিকল্প জায়গা ঠিক করা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আসলে গোটা এলাকা বেচে দিয়েছেন। আলিপুর সেন্ট্রাল জেল, চিড়িয়াখানা বেচে দিয়েছেন। বাকি রয়েছে আপনাদের এই এলাকা। শপিং মল হবে, বিউটি পার্লার হবে।”
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যাতে কোনোভাবেই নিজেদের জায়গা না ছাড়েন, সেকথা বারবার এদিন বুঝিয়ে যান শুভেন্দু। এর আগে সিপিএমও এই ঘটনাকে ‘ম্যান মেড অগ্নিকাণ্ড’ বা মানবসৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড বলে তত্ত্ব খাড়া করেছিল। এবার বিজেপিও একই দিকে ইঙ্গিত দেওয়ায় খিদিরপুর মার্কেটের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর আরও তীব্র হলো। এই ঘটনার প্রকৃত কারণ এবং এর ভবিষ্যৎ পরিণতি নিয়ে জনমনে বাড়ছে কৌতূহল।