রাজ্য বিজেপিতে কোণঠাসা দিলীপ ঘোষ, নতুন দল গঠনের গুঞ্জন তুঙ্গে, অস্বীকার নেতার, কটাক্ষ তৃণমূলের

রাজ্য বিজেপিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন একদা দলের সফলতম মুখ দিলীপ ঘোষ। বর্তমানে দলের একাধিক কর্মসূচিতে তাঁর অনুপস্থিতি এবং রাজনৈতিক মহলে তাঁর নতুন দল গঠনের জল্পনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। যদিও দিলীপ ঘোষ নিজে এই গুঞ্জন অস্বীকার করেছেন, কিন্তু দলের অন্দরের সূত্র এবং তৃণমূলের কটাক্ষ এই জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে।

একসময় রাজ্য বিজেপির সফল সভাপতি হিসেবে পরিচিত দিলীপ ঘোষ বর্তমানে দলের অভ্যন্তরে অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। তিনি রাজ্য বিজেপির অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে ডাক পান না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দলের অন্দরেই নানা প্রশ্ন উঠছে।

বিজেপির অন্দরের গুঞ্জন অনুযায়ী, দিলীপ ঘোষ নাকি নতুন দল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং ইতিমধ্যেই এর প্রথম পর্বের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রের দাবি, দিলীপ ঘোষের এই নতুন পরিকল্পনা সম্পর্কে তাঁরা অবগত এবং তিনি বিজেপি ছেড়ে নতুন দল গঠন করতে সক্ষম।

১. শুক্রবার সল্টলেকে দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে ২৫ জন নিষ্ক্রিয় বিজেপি নেতা-নেত্রীকে নিয়ে একটি গোপন বৈঠক হয়।
২. তিনি একটি হিন্দুত্ববাদী দল গঠনের পরিকল্পনা করছেন, যার প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে।
৩. দলের সম্ভাব্য নাম হতে পারে ‘পশ্চিমবঙ্গ হিন্দু সেনা’, যা একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিসেবে কাজ করবে।
৪. ইতিমধ্যেই কলকাতার একটি অংশে এই দলের নাম লেখা টি-শার্ট বিলি করা হয়েছে।
৫. দ্রুত নির্বাচন কমিশনে দলের নাম নথিভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা পড়তে চলেছে এবং আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনে এই নতুন দল অংশ নিতে পারে বলে গুঞ্জন।

এই সমস্ত জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, “নতুন দল গঠন করা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই।” তিনি আরও বলেন, “আমি দল দাঁড় করিয়েছি। দল গঠন করিনি। দল গঠন করার দরকার নেই। সত্তর বছর ধরে লড়াই করে আমরা দল দাঁড় করিয়েছি।”

সূত্রের খবর, দিলীপ ঘোষের ওই বৈঠকে ২৫ জন নিষ্ক্রিয় বিজেপি নেতা-নেত্রী উপস্থিত ছিলেন, যারা বর্তমানে রাজ্য বিজেপির মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদের নিয়েই নতুন দল গঠনের একটি ব্লুপ্রিন্ট তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে, যদিও কেউই এই বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নন।

এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ কটাক্ষ করে বলেছেন, “দিলীপ ঘোষ নিজের দলে কোণঠাসা হয়ে দলের লাইনে ফেরার চেষ্টা করছেন। এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই।”

দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে এই জল্পনা রাজ্য বিজেপিতে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তিনি কি সত্যিই নতুন পথের সন্ধানে, নাকি এই সবই নিছকই গুঞ্জন, তা সময়ই বলবে।

বিশ্লেষণমূলক সংবাদ প্রতিবেদন
দিলীপ ঘোষের নতুন চাল: কোণঠাসা নেতার ‘হিন্দু সেনা’ গুঞ্জন, বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বের চরম প্রকাশ?

রাজ্য বিজেপিতে দিলীপ ঘোষের ক্রমবর্ধমান কোণঠাসা অবস্থা এখন নতুন মাত্রা নিয়েছে। একসময় রাজ্য বিজেপির ‘পোস্টার বয়’ হিসেবে পরিচিত এই নেতাকে ঘিরে ‘নতুন দল গঠন’-এর চাঞ্চল্যকর গুঞ্জন দানা বেঁধেছে। যদি এই জল্পনা সত্য হয়, তবে তা শুধু দিলীপ ঘোষের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক পদক্ষেপই হবে না, বরং রাজ্য বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বের এক চরম প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হবে।

দিলীপ ঘোষ, যিনি একসময় নিজের আক্রমণাত্মক মন্তব্যে এবং হিন্দুত্ববাদী ভাবধারায় বিজেপিকে বাংলার জনমানসে এক পরিচিত মুখ করে তুলেছিলেন, তিনি বর্তমানে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অনেকটাই ব্রাত্য। দলের একাধিক কর্মসূচিতে তাঁর অনুপস্থিতি এবং শীর্ষ পদে তাঁর প্রভাব হ্রাস, এই পরিস্থিতিকে আরও প্রকট করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, একজন সফল নেতার এমন ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পড়া স্বাভাবিক নয়, এবং এটি তাঁর ‘ঘুরে দাঁড়ানোর’ মরিয়া প্রচেষ্টার ইঙ্গিত।

দিলীপ ঘোষের ‘নতুন দল’ গঠনের গুঞ্জন আকস্মিক নয়। দলের অন্দরের সূত্রের খবর অনুযায়ী, শুক্রবার সল্টলেকে ২৫ জন ‘নিষ্ক্রিয়’ বিজেপি নেতা-নেত্রীকে নিয়ে তাঁর গোপন বৈঠক এই জল্পনার পালে হাওয়া দিয়েছে। এই বৈঠককে ‘নতুন দলের ব্লুপ্রিন্ট’ তৈরির প্রথম ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গুঞ্জনগুলি যে পাঁচটি ধারায় বিস্তৃত হয়েছে, তা হলো:
১. গোপন বৈঠক: নিষ্ক্রিয় বিজেপি নেতাদের নিয়ে একটি ‘ক্লোজড ডোর’ আলোচনা, যা দলীয় শৃঙ্খলার ঊর্ধ্বে গিয়ে নতুন সমীকরণ তৈরির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
২. হিন্দুত্ববাদী প্ল্যাটফর্ম: দিলীপ ঘোষের হিন্দুত্ববাদী ভাবধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি নতুন দল গঠনের পরিকল্পনা, যা বিজেপির মূল আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, বরং তার একটি ভিন্ন সংস্করণ হতে পারে।
৩. ‘পশ্চিমবঙ্গ হিন্দু সেনা’ নাম: এই নাম হিন্দুত্বের প্রতি দিলীপ ঘোষের অবিচল আস্থার প্রতীক এবং এটি একটি সুনির্দিষ্ট ভোটব্যাঙ্ককে লক্ষ্য করে গঠিত হতে পারে।
৪. টি-শার্ট বিলি: দলের নাম সম্বলিত টি-শার্টের ব্যবহার একটি প্রাথমিক গণসংযোগ কৌশল, যা নীরবে জনমত তৈরির চেষ্টা করছে।
৫. নির্বাচন কমিশনে নথিভুক্তি ও বিধানসভা নির্বাচন: যদি এটি সত্যি হয়, তবে দিলীপ ঘোষের এই পদক্ষেপ ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা।

দিলীপ ঘোষ স্বাভাবিকভাবেই এই গুঞ্জন অস্বীকার করেছেন। তাঁর মন্তব্য, “আমি দল দাঁড় করিয়েছি। দল গঠন করিনি। দল গঠন করার দরকার নেই। সত্তর বছর ধরে লড়াই করে আমরা দল দাঁড় করিয়েছি,” একাধারে তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতার প্রতি আস্থা এবং বিজেপির প্রতি তাঁর আনুগত্য প্রদর্শনের চেষ্টা। তবে, এই অস্বীকারের আড়ালে কি নতুন কোনো রাজনৈতিক কৌশল লুকিয়ে আছে, তা নিয়ে জল্পনা থেকেই যাচ্ছে। একজন অভিজ্ঞ নেতা প্রকাশ্যে এমন গুঞ্জন নিশ্চিতভাবে উড়িয়ে দিলেও, এর নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি।

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের কটাক্ষ, “দিলীপ ঘোষ নিজের দলে কোণঠাসা হয়ে দলের লাইনে ফেরার চেষ্টা করছেন। এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই,” রাজ্য বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বের ওপর আলোকপাত করেছে। দিলীপ ঘোষের মতো একজন জনপ্রিয় নেতার এই ধরনের জল্পনা, দলের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় এবং ভবিষ্যতের নেতৃত্ব নিয়ে বিজেপির জন্য এক বড় অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

দিলীপ ঘোষের ‘নতুন দল’ গঠনের গুঞ্জন যদি সত্য হয়, তাহলে তা রাজ্য বিজেপির জন্য এক বিশাল ধাক্কা হবে। এটি কেবল একজন নেতার দলত্যাগ নয়, বরং দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার লড়াইয়ের ইঙ্গিত দেবে। অন্যদিকে, যদি এটি নিছকই গুঞ্জন হয়, তবে এই গুঞ্জনই প্রমাণ করে যে রাজ্য বিজেপির অন্দরে সব ঠিক নেই। দিলীপ ঘোষের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং এই জল্পনার চূড়ান্ত পরিণতি কী হয়, তার উপরই নির্ভর করছে বাংলার রাজনীতির এক নতুন সমীকরণ।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy