
উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় রাজ্য সরকারের একটি আবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। অতিরিক্ত শূন্যপদ (সুপারনিউমেরারি পোস্ট)-এ নিয়োগের উপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের আবেদন সোমবার বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে শুনানির সময় আদালতকে বিস্মিত করেছে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল স্পষ্ট: অতিরিক্ত শূন্যপদের উপর যে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি হয়েছিল, সেটি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই শেষ হয়ে গেছে। অর্থাৎ, আদেশটি বর্তমানে কার্যকর নয়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার যখন কার্যকর নয় এমন একটি আদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন জানাচ্ছে, তখন তার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু মন্তব্য করেন, “রাজ্য যখন নিজেই বলছে অন্তর্বর্তী আদেশটি কার্যকর নয়, তখন সেটি প্রত্যাহারের আবেদন কেন? রাজ্যের বক্তব্যের মধ্যে স্পষ্টতার অভাব রয়েছে এবং আদালত বুঝতে পারছে না কোন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”
মামলার পটভূমি ছিল এইরকম: ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে রাজ্য সরকার উচ্চ প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষা এবং কর্মশিক্ষা বিষয়ের জন্য ওয়েটিং লিস্ট থেকে নিয়োগের উদ্দেশ্যে কিছু অতিরিক্ত শূন্যপদ তৈরি করে। এর বিরুদ্ধে মামলা হলে হাইকোর্ট একটি অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করে। তবে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির পর সেই স্থগিতাদেশের মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি।
সম্প্রতি, ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সুপারনিউমেরারি পদ তৈরির ক্ষেত্রে রাজ্যের ভূমিকায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করেনি। সুপ্রিম কোর্টের সেই বিষয়টির উল্লেখ করে রাজ্য সরকার কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানায় যে উচ্চ প্রাথমিকে সুপারনিউমেরারি পদে নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হোক এবং পূর্বের মেয়াদোত্তীর্ণ স্থগিতাদেশটি প্রত্যাহার করা হোক।
অন্যদিকে, এই মামলার মূল আবেদনকারীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে রাজ্য এই সুযোগে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। তাই তাঁরা আদালতে নতুন করে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারির আবেদন জানিয়েছেন, যাতে রাজ্য নিয়োগের সঙ্গে এগিয়ে যেতে না পারে।
বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু মূল আবেদনকারীদের নির্দেশ দিয়েছেন যে তাঁদের এই আবেদনটি লিখিত আকারে বুধবারের মধ্যে জমা দিতে হবে। লিখিত আবেদন জমা পড়ার পরেই এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারিত হয়েছে। রাজ্যের আবেদন, মামলাকারীদের পাল্টা যুক্তি এবং হাইকোর্টের রায়ের উপর নির্ভর করছে উচ্চ প্রাথমিকে এই অতিরিক্ত শূন্যপদগুলিতে নিয়োগের ভবিষ্যৎ। আদালতের পর্যবেক্ষণ রাজ্যের অবস্থানকে কিছুটা হলেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।