রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে, পরিযায়ী শ্রমিক ও ‘হালাল প্রসাদ’ বিতর্কে মমতাকে পাল্টা সুকান্তের

রাজস্থানে এক বাঙালি শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেফতারের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরব হওয়ার পর এবার তাঁকে তীব্র পাল্টা দিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যু থেকে শুরু করে ‘হালাল মিষ্টি’ বিতর্কে জগন্নাথ দেবের প্রসাদের প্রসঙ্গ টেনে সুকান্তের মন্তব্য নতুন করে রাজনৈতিক তরজা উসকে দিয়েছে।

মঙ্গলবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে সুকান্ত মজুমদার অত্যন্ত কড়া ভাষায় মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনায় মুখর হন। রাজস্থানে শ্রমিকের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগ প্রকাশকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই আজ এত পরিযায়ী শ্রমিক। রাজ্যে কর্মসংস্থানের অভাবের কারণেই পশ্চিমবঙ্গের যুবকদের ভিনরাজ্যে কাজের সন্ধানে যেতে হচ্ছে।” তাঁর এই মন্তব্য রাজ্যের কর্মসংস্থান পরিস্থিতি নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে বিজেপির দীর্ঘদিনের অভিযোগকেই নতুন করে সামনে আনল। সুকান্ত মজুমদার আরও ইঙ্গিত দেন যে, রাজ্যের শিল্পায়নের ব্যর্থতা এবং বিনিয়োগের অভাবই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

তবে সুকান্তের বক্তব্যে সবথেকে বেশি বিতর্ক তৈরি হয়েছে জগন্নাথ দেবের প্রসাদ নিয়ে তাঁর অভিযোগকে কেন্দ্র করে। তিনি দাবি করেন, “মুখ্যমন্ত্রী হালাল মিষ্টি জগন্নাথ দেবের প্রসাদের নামে বিলি করছেন।” এই অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার একটি গুরুতর অভিযোগ হিসেবে সামনে এসেছে। বিজেপির এই ধরনের মন্তব্য অতীতেও বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের মাধ্যমে সুকান্ত মজুমদার একদিকে যেমন হিন্দু ভোটব্যাংকে বার্তা দিতে চেয়েছেন, তেমনই অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি গুরুতর বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সুকান্ত মজুমদারের এই আক্রমণাত্মক মন্তব্য আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতিরই অংশ। পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যুকে রাজ্যের কর্মসংস্থান পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত করে তিনি শাসকদলের ব্যর্থতাকে তুলে ধরতে চাইছেন, আর ‘হালাল মিষ্টি’ বিতর্কের মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় বিভাজনের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস এই অভিযোগগুলিকে ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের মতে, বিজেপি অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে আসল সমস্যা থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে চাইছে।

এই মুহূর্তে, সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্যগুলি নিঃসন্দেহে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই অভিযোগগুলির কী জবাব আসে এবং এই বিতর্ক সাধারণ মানুষের উপর কতটা প্রভাব ফেলে, এখন সেটাই দেখার।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy