
রবিবার সকালে রবীন্দ্র সরোবরে সাঁতার কাটতে নেমে মর্মান্তিকভাবে ডুবে মৃত্যু হল ১৬ বছর বয়সী শিভম সিংহ নামের এক কিশোরের। গড়িয়াহাট এলাকার বালিগঞ্জ প্লেসের বাসিন্দা শিভমের এই অকাল মৃত্যু ঘিরে সরোবর চত্বরে শোকের পাশাপাশি তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকালে শিভম লেকে সাঁতার কাটতে নামে। জলের নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই সে নিখোঁজ হয়ে যায়। স্থানীয়রা দ্রুত তাকে খুঁজতে শুরু করেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তার নিথর দেহ উদ্ধার হয়। তাকে দ্রুত এমআর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয়দের ক্ষোভ ও অভিযোগ:
এই দুর্ঘটনার পর রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের একাংশ সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের মূল অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে লেক পরিষ্কার করা হয় না। লেকের তলদেশ আগাছা ও জলজ গুল্মে ভরে উঠেছে, যার ফলে জলের নিচে কী আছে, তা পরিষ্কার বোঝা যায় না।
এক স্থানীয় বাসিন্দা, যিনি নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণে আসেন, সংবাদমাধ্যমকে জানান, “প্রতিদিনই আমরা এখানে আসি। ছেলেটি ওই বটগাছের পাশেই জলে নামে। ওখানে বেশ আগাছা ভরে রয়েছে। যারা নিয়মিত আসেন, তারা জানেন কোন দিকটা বিপজ্জনক।” তিনি আরও যোগ করেন, যারা নিয়মিত সাঁতার কাটেন, তারা নিজেরাই সাবধানতা অবলম্বন করেন, কিন্তু যারা নতুন বা অনভিজ্ঞ, তাদের কাছে এই বিপদগুলি অজানা থাকে, যার ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, কলকাতা পুরসভা বা অন্য কোনো প্রশাসনিক সংস্থা লেকের আগাছা পরিষ্কার করার দিকে সেভাবে নজর দেয় না। মাঝে মাঝে কিছুটা পরিষ্কার করা হলেও সারা বছর ধরে কিছু অংশে পরিচর্যার ঘাটতি থেকেই যায়। অনেকেই অবিলম্বে লেকের তলার আগাছা ও গাছপালা সরিয়ে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থার দাবি তুলেছেন।
পরিবেশবিদদের মত ও সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা:
যদিও পরিবেশবিদরা বলছেন যে জলাশয়ের বাস্তুতন্ত্রের জন্য জলজ গাছপালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবুও তারা একমত যে যে স্থানগুলিতে সাঁতার কাটা হয়, সেখানে জলজ গাছ কেটে-ছেঁটে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে নতুন যারা জলাশয়ে নামছেন, তাদের সতর্ক করার জন্য উপযুক্ত বোর্ড বসানো উচিত বলেও অনেকে মত দিয়েছেন।
এই মর্মান্তিক ঘটনা রবীন্দ্র সরোবরের নিরাপত্তা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দিকে আরও বেশি মনোযোগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরল। শিভমের মৃত্যু নিছকই একটি দুর্ঘটনা নাকি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার ফল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশাসন কি এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে লেকের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, নাকি আরও একটি দুর্ঘটনার জন্য অপেক্ষা করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।