
দোলের দিন রবীন্দ্র সরোবরে বসন্ত উৎসব আয়োজন নিয়ে তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক। শুক্রবার সকাল থেকেই রবীন্দ্র সরোবর লেক চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, দোল ও হোলি উপলক্ষে সাধারণ মানুষের জন্য লেকের গেট বন্ধ থাকলেও, একটি ক্লাব কীভাবে লেকের ভিতরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করল। এই নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রাতঃভ্রমণকারীদের সঙ্গে আয়োজকদের বচসা বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
কী হয়েছে ঘটনাটি?
জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশিকা অনুযায়ী, দোল ও হোলির দিন রবীন্দ্র সরোবরের গেট সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ থাকে। তবে এবার এই নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। শুক্রবার সকালে রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে ‘ইন্ডিয়ান লাইফ সেভিং সোসাইটি’ নামে একটি ক্লাব বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানের জন্য লেকের ভিতরে বাদ্যযন্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে গাড়ি ঢোকার দৃশ্য স্থানীয় বাসিন্দাদের চোখ এড়ায়নি।
প্রাতঃভ্রমণকারীরা অভিযোগ করেন, “আমরা যদি লেকে প্রবেশ করতে না পারি, তাহলে একটি ক্লাব কীভাবে লেকের ভিতরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করল? এটি কোর্টের নির্দেশিকা ও কেএমডিএ-এর শর্তকে বুড়ো আঙুল দেখানোর শামিল।”
কেএমডিএ ও আয়োজকদের বক্তব্য
আয়োজক সংস্থার দাবি, তারা কেএমডিএ-এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তবে এই দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশপ্রেমীরা। লেক লাভার্স ফোরামের সদস্য সৌমেন্দ্রমোহন ঘোষ কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মাকে ইমেল করে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানান। তিনি অভিযোগ করেন, “দোলের দিন রবীন্দ্র সরোবরের ভিতরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।”
পুলিশের তৎপরতা
রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় থানার পুলিশ, ডেপুটি কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার আধিকারিকের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি শান্ত থাকে, তবে বিতর্ক থামেনি।
পরিবেশপ্রেমীদের উদ্বেগ
পরিবেশপ্রেমীরা দাবি করেন, রবীন্দ্র সরোবর একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানে অনুষ্ঠান আয়োজনের ফলে লেকের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তারা প্রশ্ন তোলেন, “কীভাবে একটি ক্লাবকে লেকের ভিতরে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হলো, যখন সাধারণ মানুষ লেকে প্রবেশ করতে পারছেন না?”
উপসংহার
রবীন্দ্র সরোবরে বসন্ত উৎসব আয়োজন নিয়ে এই বিতর্ক প্রশ্ন তুলেছে প্রশাসনিক অনুমোদন ও পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে। সাধারণ মানুষ ও পরিবেশপ্রেমীরা এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আগামী দিনে রবীন্দ্র সরোবরের মতো পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে কী ধরনের নীতি গ্রহণ করা হয়, তা দেখার বিষয়।