‘রক্ত ও জল….’- পাকিস্তানকে কড়া বার্তা ভারতের! সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতের পর এবার কোন পথে এগোবে ভারত?

“রক্ত ও জল একসঙ্গে বইতে পারে না” – পাকিস্তানকে এই কড়া বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছে ভারত। সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার আবহে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর এবার ভারতের ভবিষ্যৎ ব্লুপ্রিন্ট স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, চলমান কোনো প্রকল্পের কাজ বন্ধ হবে না, বরং পরিকল্পনা স্তরে বা নির্মাণের প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির জলধারণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রীর এই ঘোষণা পাকিস্তানকে এক স্পষ্ট হুঁশিয়ারি বলেই মনে করা হচ্ছে।

ভারতের ‘জল যুদ্ধ’ ব্লুপ্রিন্ট:

ভারত এবার জল বণ্টনের ক্ষেত্রে তার নিজস্ব কৌশলে এগোতে চলেছে। ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরেই জম্মু ও কাশ্মীর-এ সিন্ধু জলচুক্তির সম্পূর্ণ বিপরীতে প্রথম গভীর জলাধার সম্পন্ন (১০৯ কিউবিক মিটার) জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ‘পাকাল ডাল’ (Pakal Dul) চালু হতে পারে। এই পদক্ষেপ আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পূর্ববর্তী ও নতুন প্রকল্প:

পাহেলগাঁও হামলার আগেই ভারত নদীর প্রাকৃতিক স্রোতকে টারবাইনের মাধ্যমে ব্যবহার করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চারটি প্রকল্পের ঘোষণা করেছিল। সেগুলিতে বড় গভীর জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা না থাকায় পাকিস্তানের আপত্তির কারণ ছিল না। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে ছিল:

সিন্ধ নালার উপর ৯৩ মেগাওয়াটের নতুন গন্দেরবাল প্রকল্প।
কীর্থাই ২ তে ৯৩০ মেগাওয়াট।
চেনাব নদীর উপর সওয়ালকোটে ১৮৫৬ মেগাওয়াট।
ঝিলাম নদীর উপর ২৪০ মেগাওয়াটের উরি ১, স্টেজ ২ প্রকল্প।
এছাড়াও, কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (Central Electricity Authority) বর্তমানে নদীর প্রাকৃতিক স্রোতকে ব্যবহার করে আরও দুটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে।

জম্মু-কাশ্মীরে জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত:

বিশেষজ্ঞদের মতে, জম্মু-কাশ্মীরে এখনও ১০৮৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মোট ৯টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে গভীর জলাধার এবং বাঁধ-সহ ৩টি প্রকল্প সম্ভব কিনা, তা নিয়ে বিশদ পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। চেনাবের উপনদী মরুসূদরের উপর বুরাসর প্রজেক্ট, গঙ্গবাল এবং ওয়ার্ডওয়ান বুরাসর প্রজেক্ট নিয়েও বর্তমানে আলোচনা চলছে।

ভারতের এই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা সিন্ধু জলচুক্তির ভবিষ্যৎ এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ওপর কী প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে ভারতের জল নিরাপত্তা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy