রক্তাক্ত লাভপুর! গ্রামদখলের লড়াইয়ে বোমা বিস্ফোরণ, প্রাণ গেল দু’জনের

ফের অশান্ত, রক্তাক্ত বীরভূমের লাভপুর। এবার গ্রাম দখলকে কেন্দ্র করে ভয়ঙ্কর বোমাবাজির শিকার হলো লাভপুর থানা এলাকার হাতিয়া গ্রাম। শুক্রবার গভীর রাতে শুরু হওয়া উত্তেজনা শনিবার সকালে ভয়াবহ রূপ নেয় যখন বোমা বাঁধতে গিয়ে বিস্ফোরণে অন্তত দু’জনের মৃত্যু হয় বলে খবর। এই ঘটনা আবারও রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বিস্ফোরণে দু’জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করেছেন এবং ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তবে, এই বিস্ফোরণ নিছকই একটি দুর্ঘটনা নয়, এর পেছনে রয়েছে এলাকার বহু পুরনো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং অবৈধ কার্যকলাপের ইতিহাস।

নকল কয়েন চক্রের ডামাডোল:

হাতিয়া গ্রাম দীর্ঘদিন ধরেই নকল কয়েন বিক্রির একটি কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এই গ্রামের দখলকে কেন্দ্র করেই মূলত দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিনের বিবাদ। একপক্ষে রয়েছেন হাতিয়ার বুথ সভাপতি শেখ মইনুদ্দিন এবং তাঁর সহযোগী শেখ মুস্তাফি। অন্যদিকে রয়েছেন জাল কয়েন বিক্রেতাদের ‘মাথা’ শেখ মনির।

গত প্রায় ছয় মাস ধরে মইনুদ্দিন ও মুস্তাফি ফেরার ছিলেন। গতকাল সন্ধ্যায় তাঁরা গ্রামে প্রবেশের চেষ্টা করলে মনিরের লোকজন তাঁদের বাধা দেয়। হাতিয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরপরেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। রাত তিনটে নাগাদ আবারও মইনুদ্দিন ও মুস্তাফি গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেন, কিন্তু সেবারও তাঁদের আটকে দেওয়া হয়।

ভোরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ:

দুইবার ব্যর্থ হওয়ার পর, আজ সকালে সাতটা নাগাদ মইনুদ্দিন ও মুস্তাফি দলবল নিয়ে ফের গ্রামে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এই সময় হাতিয়া গ্রামেরই ছাতিম পুকুরের পাড়ে বসে মনিরের দলবল বোমা বাঁধছিল বলে খবর। আর তখনই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।

সূত্র উদ্ধৃত করে একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বিস্ফোরণের অভিঘাতে অনেকে ছিন্নভিন্ন হয়ে যান। প্রাণ হারান দু’জন – যার মধ্যে একজন তৃণমূল নেতা শেখ বাদলের ছেলে এবং দ্বিতীয়জন স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল খানের ভাগ্নে। গুরুতর আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই ঘটনা গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

বারবার শিরোনামে হাতিয়া:

এই প্রথম নয় যে হাতিয়া গ্রাম শিরোনামে এল। এর আগেও ২০২৪ সালের মার্চ মাসে নকল অস্ত্র কারখানার হদিশ পেয়ে গ্রামে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল পুলিশ। পরিস্থিতি এতটাই তেতে উঠেছিল যে, সামাল দিতে উর্দিধারীদের শূন্যে গুলি চালাতে হয়েছিল। সেই ঘটনার এক বছর পর আবারও সেই হাতিয়াতেই প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ এবং প্রাণহানি, যা স্পষ্ট করে দেয় যে এই এলাকায় অবৈধ কার্যকলাপ এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকড় কতটা গভীরে প্রবেশ করেছে। এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ প্রমাণ করে দিল, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রশাসনের নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy