
আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের নবম শ্রেণীর এক ছাত্রের আত্মহত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পরিবার ও পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে এক ভয়াবহ অভিযোগ – যৌন হেনস্থা এবং ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়েই ১৫ বছর বয়সী ওই নাবালক চরম পথ বেছে নিয়েছে। আসানসোল উত্তর থানা এলাকার এই ঘটনায় অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছে ছাত্রের পরিবার।
জানা গেছে, গত ২৯ মে নিজ বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে ওই ছাত্র। কেন এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটলো, তা নিয়ে প্রাথমিকভাবে পরিবার ছিল ধোঁয়াশার মধ্যে। কিন্তু পরবর্তীতে মৃত ছাত্রের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার পর এবং তার মোবাইল ফোন খতিয়ে দেখার পর ঘটনার আসল কারণ প্রকাশ্যে আসে।
পরিবারের অভিযোগ, গত জানুয়ারি মাসে এক যুবক জোর করে ওই ছাত্রকে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। গাড়িতে তাকে মাদক খাইয়ে যৌন হেনস্থা করা হয় এবং সেই ঘটনার ভিডিও তুলে রাখা হয়। এরপর অভিযুক্ত যুবক ওই ভিডিও ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ছাত্রটিকে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে, তার কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। এই ধারাবাহিক ব্ল্যাকমেলের চাপেই ছাত্রটি তীব্র মানসিক অবসাদে ভুগছিল বলে পরিবারের দাবি।
মৃত ছাত্রের দিদি জানান, “টিউশনে এক বন্ধুর মাধ্যমে অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে ভাইয়ের বন্ধুত্ব হয়েছিল। তারপর একদিন ভাইকে মাদক খাইয়ে যৌন হেনস্থা করে ছবি তুলে রাখে।” তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার পর থেকেই ভাই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল এবং কোনো কিছুতেই মন দিতে পারছিল না।
এই গুরুতর ঘটনায় আসানসোল উত্তর থানায় অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে ছাত্রের পরিবার। পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয়রা অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
আসানসোল উত্তর থানা পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশি সূত্রে খবর, অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করার এবং তার দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবশ্য এই ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এই ঘটনা একদিকে যেমন সমাজে ঘটে চলা যৌন অপরাধের ভয়াবহতা তুলে ধরেছে, তেমনি প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ব্ল্যাকমেলের মতো নতুন ধরনের অপরাধের চিত্রও সামনে এনেছে। একই সাথে, অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং তাদের সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের মধ্যে এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।