
যোধপুর পার্কের এক আবাসনের সামনে থেকে কলেজ ছাত্রী সায়নী শেখের (২১) রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বুধবার দুপুরে হঠাৎই কিছু ভারী বস্তু মাটিতে আছড়ে পড়ার শব্দ শুনে স্থানীয়রা ছুটে এসে দেখেন, বহুতলের সামনে পড়ে রয়েছেন ওই যুবতী। চারপাশে রক্তের ছড়াছড়ি, যা এক মর্মান্তিক দৃশ্যের জন্ম দেয়। এই ঘটনায় রহস্য দানা বেঁধেছে, কারণ এটি আত্মহত্যা নাকি অন্য কিছু, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
পূর্বস্থলী থেকে যোধপুর পার্ক, দিদির কাছে পেইন গেস্ট
সায়নীর বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে। তিনি কালনা কলেজের সাইকোলজি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরেই সায়নী তাঁর দিদির সঙ্গে যোধপুর পার্কের ওই চারতলা আবাসনে পেইং গেস্ট হিসেবে থাকছিলেন। স্থানীয়দের বয়ান অনুযায়ী, সায়নী দিদির কাছে আসার পর থেকেই দুই বোনের মধ্যে প্রায়শই অশান্তি লেগে থাকত। তাদের ঝগড়ার আওয়াজ পাশের ফ্ল্যাট থেকেও শোনা যেত বলে জানা গেছে।
পুলিশি তদন্ত ও প্রাথমিক অনুমান
ঘটনার খবর পেয়ে লেক থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সায়নীর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার জানিয়েছেন, “দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসার পরেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা সম্ভব হবে।”
পুলিশ সায়নীর দিদিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। তদন্তকারীরা জানার চেষ্টা করছেন, দুই বোনের মধ্যে কী নিয়ে সমস্যা চলছিল। এই ঘটনার পিছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সায়নী নিজে চারতলা থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন, নাকি তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে, তা নিয়েই মূল তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে যে, সায়নী দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর কোনো চিকিৎসা চলছিল কিনা, সেই বিষয়েও তদন্তকারীরা তথ্য যাচাই করছেন। ফলে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখার পরই সায়নী শেখের মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। এই রহস্যের জট খুলতে মরিয়া পুলিশ।
এই ঘটনাটি কি স্রেফ একটি আত্মহত্যা, নাকি এর পিছনে অন্য কোনো গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে? ময়না তদন্তের রিপোর্ট এবং পুলিশি তদন্তের পরই এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে।