যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরান, ভারতীয় শিক্ষার্থীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, সরকারের কাছে ‘ঘরে ফেরার’ আকুতি

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্টি হয়েছে এক ভয়ংকর পরিস্থিতি। এই যুদ্ধের আঁচ এসে লেগেছে ইরানে পড়াশোনা করতে যাওয়া হাজার হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থীর জীবনে। চরম ঝুঁকির মধ্যে দিন কাটানো এই শিক্ষার্থীরা এখন ভারত সরকারের কাছে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছেন। ইতোমধ্যে উর্মিয়া মেডিকেল ইউনিভার্সিটি থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যা বাকিদের মনে আশার সঞ্চার করেছে।

কেন ভারতীয় শিক্ষার্থীরা ইরানে পাড়ি দেন?

প্রশ্ন জাগে, কেন প্রতি বছর এত সংখ্যক ভারতীয় শিক্ষার্থী ইরানকে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে বেছে নেন? এর মূল কারণ দুটি: কম খরচে উচ্চশিক্ষা এবং বিশেষ করে মেডিকেল শিক্ষায় সুযোগের সহজলভ্যতা। ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, কেবল ২০২২ সালেই প্রায় ২০৫০ ভারতীয় ছাত্র ইরানে বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। প্রতি বছর প্রায় ২০,০০০-২৫,০০০ ভারতীয় ছাত্র বিদেশে পড়াশোনা করতে যান, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বেছে নেন ইরানকে।

মেডিকেল শিক্ষায় ইরানের আকর্ষণ:

ইরানে সরাসরি এমবিবিএস (MBBS) ডিগ্রি না দেওয়া হলেও, সেখানে ‘ডক্টর অফ মেডিসিন’ (MD) ডিগ্রি প্রদান করা হয়, যা ভারতে এমবিবিএস-এর সমতুল্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ইরানের বেশিরভাগ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের জাতীয় চিকিৎসা কমিশন (NMC) দ্বারা স্বীকৃত। অর্থাৎ, এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা ভারতে ফিরে FMGE (বর্তমানে NEXT) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে দেশে চিকিৎসা করার অনুমতি পান।

ভারতের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সের খরচ যেখানে ৮০-৯০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি হতে পারে, সেখানে ইরানে এই খরচ অনেকটাই কম – মোটামুটি ১৮ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার মধ্যে, যার মধ্যে হোস্টেল ও কলেজের ফি-ও অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, বছরে গড়ে প্রায় ৫.৫০ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। ভারতে NEET-UG পরীক্ষার তীব্র প্রতিযোগিতা এবং সীমিত আসনের কারণে বহু শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে বিদেশে বিকল্প খোঁজে, এবং এই প্রেক্ষিতে ইরান একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে ওঠে। তবে ইরানে ভর্তির জন্যও ভারতীয় শিক্ষার্থীদের NEET পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক।

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে শিক্ষার্থীরা:

যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ইরানে থাকা ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ এখন ঘোর অনিশ্চয়তার মুখে। গত বুধবার উর্মিয়া মেডিকেল ইউনিভার্সিটি থেকে ১০০ জনেরও বেশি ভারতীয় শিক্ষার্থীকে, যার মধ্যে প্রায় ৯০ জন কাশ্মীরি ছাত্র ছিলেন, বিমানে করে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি স্বস্তির খবর, তবে এখনও বহু শিক্ষার্থী ইরানে আটকে আছেন এবং নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।

যুদ্ধ পরিস্থিতি চলতে থাকলে তাদের পড়াশোনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। ভারত সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাকি শিক্ষার্থীদেরও সুরক্ষিতভাবে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য পরিবার ও শিক্ষার্থীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy