“যা কেউ দেখেনি আগে..”-বাদ পড়া দৃশ্য নিয়ে ফিরছে কালজয়ী ‘শোলে’ সিনেমা

ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম ‘শোলে’। ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই কালজয়ী ছবিটি এবার এক নতুন রূপে ফিরে আসছে, যেখানে যুক্ত হয়েছে পূর্বে না দেখা কিছু দৃশ্য। এই ঐতিহাসিক সংস্করণ প্রদর্শিত হতে চলেছে ইতালির প্রেস্টিজিয়াস ‘ইল সিনেমা রিত্রোভাতো’ উৎসবে, যা বিশ্বজুড়ে সিনেমা প্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে।

১৯৭৫ সালে রমেশ সিপ্পির পরিচালনায় নির্মিত এই আইকনিক অ্যাকশন ড্রামা চলচ্চিত্রটি ২৭ জুন ইতালির বোলোনিয়ার ঐতিহাসিক পিয়াজ্জা মায়োরে খোলা চত্বরে প্রদর্শিত হবে। আর এই প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় চমক হলো ছবির সেই শেষাংশ এবং বাদ পড়া দুটি দৃশ্য, যা এর আগে কোনো প্রেক্ষাগৃহ সংস্করণে দর্শক দেখতে পাননি। এই প্রথমবারের মতো বৃহৎ পর্দায় সেই হারিয়ে যাওয়া মুহূর্তগুলো ফিরে আসছে।

‘শোলে’ – এক মাইলফলক যা সময়কে ছাপিয়ে যায়
সেলিম-জাভেদ জুটির অনবদ্য চিত্রনাট্যে তৈরি ‘শোলে’ অ্যাকশন, প্রতিশোধ, হাস্যরস এবং ট্র্যাজেডির এক অসাধারণ মিশেল। আর.ডি. বর্মনের সুরারোপিত কালজয়ী গানগুলো ছবিটিকে দিয়েছে এক অন্য মাত্রা। গল্পটি আবর্তিত হয়েছে প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা ঠাকুর বলদেব সিং এবং দুই নির্ভীক যুবক বীরু ও জয়কে কেন্দ্র করে। ভয়ংকর ডাকাত গব্বর সিংকে ধরার জন্য তাদের মিশন এবং সেই অভিযানে ঘটে যাওয়া রোমাঞ্চকর ঘটনাগুলো আজও দর্শক হৃদয়ে গেঁথে আছে।

এই চলচ্চিত্রে সঞ্জীব কুমার, অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, হেমা মালিনী এবং জয়া ভাদুড়ীর মতো কিংবদন্তি অভিনেতারা অভিনয় করেছেন। তবে গব্বর সিংয়ের চরিত্রে আমজাদ খানের অভিনয় এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, চরিত্রটি নিজেই কালজয়ী হয়ে উঠেছে।

তারকাদের আনন্দ ও স্মৃতিকথা
ছবিটি নতুন করে পুনরুদ্ধার হওয়ায় এর তারকারাও ভীষণ আনন্দিত। কিংবদন্তি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন বলেন, “কিছু কিছু জিনিস জীবনে স্থায়ী হয়ে যায়। ‘শোলে’ এমনই একটি চলচ্চিত্র। সে সময় বুঝতে পারিনি এটি ভারতীয় চলচ্চিত্রের জন্য এক মাইলফলক হয়ে উঠবে। ছবিটির শুরুর ব্যর্থতা এবং পরবর্তী বিপুল সফলতা আমাদের সকলের জন্য ছিল এক আবেগঘন যাত্রা।”

ধর্মেন্দ্র জানান, “‘শোলে’ বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য। শুনে খুব ভালো লাগছে যে ছবিটি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। আমি শুরুতেই গব্বর এবং ঠাকুরের চরিত্রের প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি পরিষ্কার ছিলাম যে আমি বীরু হতে চাই, কারণ চরিত্রটি আমার মতোই চঞ্চল। সবচেয়ে প্রিয় ছিল ট্যাঙ্কির দৃশ্য আর জয়ের মৃত্যু! আজও তা মনে গেঁথে আছে।”

‘শোলে’-এর অবিস্মরণীয় রেকর্ড
মুম্বাইয়ের মিনার্ভা প্রেক্ষাগৃহে টানা পাঁচ বছর চলা এই সিনেমাটি ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের এক অনন্য রেকর্ড। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট ২০০২ সালে ‘শোলে’কে ভারতের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯৯ সালে বিবিসি ভারত এই ছবিকে ‘সহস্রাব্দের চলচ্চিত্র’ উপাধি দিয়েছিল।

এবার নতুন সংযোজিত দৃশ্য নিয়ে ‘শোলে’র এই প্রত্যাবর্তন নিঃসন্দেহে বিশ্বজুড়ে সিনেমা প্রেমীদের জন্য এক বিশেষ অভিজ্ঞতা হতে চলেছে। ৫০ বছর পরেও ‘শোলে’ তার প্রভাব বজায় রেখেছে, যা ভারতীয় চলচ্চিত্রের চিরন্তন ক্ষমতাকে তুলে ধরে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy