যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে মিটিং-মিছিলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, সাফ নির্দেশ হাইকোর্টের

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক সভা ও মিছিলের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা অবশেষে প্রত্যাহার করল কলকাতা হাইকোর্ট। বুধবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলেন, ১৩ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কোনও রাজনৈতিক কার্যকলাপের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকলেও, এখন থেকে সেই অনুমতির দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতেই থাকছে।

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ

আদালত জানায়, “রায়ের ওই অংশ কার্যকর হয়েছে। এখন আর কোর্ট ওই দায়িত্ব নিজে নিতে চায় না। এখন থেকে কোনও সংগঠন মিটিং-মিছিল করতে চাইলে প্রশাসনকে জানাতে হবে। প্রশাসন আবেদন শুনে অনুমতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।”

প্রসঙ্গত, গত রবিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে বিজেপির সভার অনুমতি সংক্রান্ত মামলার শুনানির সময় রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল হাইকোর্ট। তবে আজ আদালত সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে দিল। এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনই মিছিল, সভা বা অন্যান্য কর্মসূচির অনুমতি দেবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের প্রবেশ নিয়ে আদালতের অবস্থান

এর আগে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে পুলিশের প্রবেশের জন্য রাজ্যের করা আবেদন খারিজ করেছিল। আদালতের বক্তব্য ছিল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিচালন কমিটি রয়েছে এবং তারাই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনা ও পুলিশি তদন্ত

সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির নীচে পড়ে প্রথম বর্ষের ছাত্র ইন্দ্রানুজ রায়ের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য পুলিশকে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেয়। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এ ঘটনায় গোয়েন্দা বিভাগের ভূমিকা নিয়েও কড়া সমালোচনা করেন।

এদিকে, যাদবপুর-কাণ্ডের তদন্ত আরও গভীরে নিয়ে যেতে নতুন করে একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে কলকাতা পুলিশ। অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। সেইসঙ্গে, তদন্তের স্বার্থে বেশ কয়েকজন পড়ুয়াকে দ্বিতীয়বার তলব করা হয়েছে। প্রথমবার তাঁরা পুলিশের তলব উপেক্ষা করায় ফের তাঁদের ডাকা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এখন কী হবে?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ফলে আবার আগের মতো সভা-মিছিল আয়োজন করা যাবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রাজনৈতিক দল, পড়ুয়া সংগঠন ও অন্যান্য সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে এখন প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন জানাতে হবে।

এই সিদ্ধান্তের পর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় কিনা এবং প্রশাসন কীভাবে বিষয়টি সামলায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy