
আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে উপস্থিত হয়ে ফের একবার বঙ্গ বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দিলেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। নাম না করে তৃণমূল ও সিপিএম থেকে বিজেপিতে আসা নেতাদের নিশানা করে তিনি দাবি করেন, “যাঁরা তৃণমূল, সিপিএম থেকে এসেছেন তাঁরাই হিংসার রাজনীতি করছেন। বিজেপির উদার রাজনীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন না।” তাঁর এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক জল্পনার সৃষ্টি করেছে। তবে কি তাঁর এই আক্রমণের মূল লক্ষ্য বর্তমান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী?
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দিলীপ ঘোষ স্পষ্টতই বলেন, “বসুধৈব কুটুম্বকম্, সবকা সাথ সবকা বিকাশ অর্থাৎ বিজেপির নীতি পরিষ্কার করে দিয়েছেন আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেভাবেই চলা উচিত।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি প্রকারান্তরে বোঝাতে চেয়েছেন যে, বিজেপির আদর্শ ও নীতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারছেন না কিছু ‘নব্য’ নেতা, যারা অন্য দল থেকে এসে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্য শুভেন্দু অধিকারীকে উদ্দেশ্য করেই করা হয়েছে, কারণ শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে তাঁর উত্থান হয়েছে এবং দিলীপ ঘোষের সঙ্গে তাঁর চাপা দ্বন্দ্বের খবর প্রায়শই প্রকাশ্যে আসে।
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যের সুযোগ হাতছাড়া করেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করেই কটাক্ষ করে বলেন, “আমি আশা করি দিলীপবাবু শুভেন্দু অধিকারীর কথাই বলেছেন। শুভেন্দুবাবুকে দলে ঢুকিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। এবং তিনি দিলীপ ঘোষকে চেয়ার থেকে নামিয়ে নিজে বসেছেন। দিলীপবাবুর কথা ভুল নয়। যত ছাঁট, জঞ্জালকে এনে বিজেপি ফুলদানিতে বসিয়েছেন। যে কারণে বাড়ির মালিক দিলীপ ঘোষ, সেই দুর্গন্ধে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।” দেবাংশুর এই মন্তব্য বিজেপি-র অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে আরও বেশি করে প্রকাশ্যে এনেছে।
দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের পাল্টা দিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, “দিলীপ ঘোষ দীর্ঘদিনের রাজনীতিবিদ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বরা গোটা দলের সম্মতি নিয়েই সব সিদ্ধান্ত নেয়। বিজেপির নীতি অনুযায়ী কাজ করছে। যদি কেউ শৃঙ্খলা না মানে তাহলে বিজেপি কথা বলবে।” শঙ্কর ঘোষ আরও যোগ করেন যে, যারা অন্য দল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছেন, তারা তো কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ছাড়পত্র পেয়েই দলে যোগ দিয়েছেন। তাহলে এ কথা কীভাবে বলা যায়? শঙ্করের এই বক্তব্য দিলীপ ঘোষের সঙ্গে দলের অন্যান্য নেতাদের মতপার্থক্যকে আরও স্পষ্ট করে তুলছে।
দিলীপ ঘোষ দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য বিজেপি সংগঠন নিয়ে একাধিকবার ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এদিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাঁর এই মন্তব্য দলের বর্তমান পরিস্থিতি এবং নেতৃত্বের মধ্যেকার বোঝাপড়ার অভাবকেই তুলে ধরে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ধরনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বঙ্গ বিজেপির জন্য কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে।