
লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে উত্তাপ তুঙ্গে। বিজেপি যখন ‘অপারেশন বেঙ্গল’-এর ডাক দিয়েছে, তখন পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপিকে ‘কালই নির্বাচন করার’ আহ্বান জানিয়েছেন। এই বাকযুদ্ধের মাঝেই ময়দানে নেমেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানোর জন্য তিনিই যথেষ্ট।
বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা থেকে কার্যত রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বেজে যায়। সেই সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্য সরকার ও তৃণমূলকে আক্রমণ শানান। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’-এর কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন, মোদীজির নেতৃত্বে বিজেপি নেতারা এই ‘অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ’ সফল করবে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতির এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “অপারেশন সিঁদুর নামটি রাজনৈতিকভাবে দেওয়া হয়েছিল। সমস্ত বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধ এবং বিশ্বের কাছে পৌঁছচ্ছে এবং সেই সময়ে রাজনৈতিক হোলি খেলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সমস্ত রাজনৈতিক দল দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিশ্বজুড়ে ঘুরছে। তারা অপারেশন বেঙ্গল করার চেষ্টা করছে। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ জানাই, আগামীকাল নির্বাচন ডাকুন। তিনি কীভাবে অপারেশন বেঙ্গল বলার সাহস পান? যদি তাই হয়, তাহলে আগামীকাল নির্বাচন ডাকুন, আমরা প্রস্তুত।” তিনি আরও যোগ করেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দেশের পক্ষে আওয়াজ তুলছেন। আর প্রধানমন্ত্রী আমাদের সরকারের সমালোচনা করছেন। বিরোধীদের দোষারোপ করছেন। মোদী বাংলার মহিলাদের অসম্মান করেছেন। আমরা সকলকে সম্মান করি। কিন্তু নিজের আত্মসম্মানের বিনিময়ে নয়।”
শুভেন্দু অধিকারীর পাল্টা জবাব:
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই চ্যালেঞ্জের জবাবে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আরও আক্রমণাত্মক সুরে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের সিঁদুর মুছতে ভালোবাসেন। হরগোবিন্দ দাস, চন্দন দাসের স্ত্রীদের সিঁদুর তো উনিই মুছেছেন। ওনার মেহবুব আলম মুছেছেন। মোদীজির সঙ্গে লড়তে হবে না। আমি লড়েই হারিয়েছি। আবার ২০২৬ সালে হারাব। মোদীর সঙ্গে কী লড়বেন? মোদীজি একটা গঙ্গা, মহাসমুদ্র। উনি কালীঘাটের নালা। কার সঙ্গে কার তুলনা করছেন? আমি হারিয়েছি, আগে আমার সঙ্গে লড়ুন, তারপর মোদীজি।”
রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের ইঙ্গিত দিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “বাংলায় নির্বাচন রাষ্ট্রপতি শাসনে হবে। ২০০ সিটে হারবেন। উনি থার্ড হবেন। অন্যরা সেকেন্ড হবেন। পাঞ্জাবে কংগ্রেসের যা অবস্থা হয়েছে, এর অবস্থাও তাই হবে। পশ্চিমবঙ্গে ভোট হয় নাকি? আজকেও নরেন্দ্র মোদীর সভায় আসার সময় ২৫টা বাস ভেঙেছে। আমাদের রাজবংশী মানুষরা আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রাষ্ট্রপতি শাসনে ভোট করুন না।”
মুখ্যমন্ত্রীকে ‘হিন্দু বিরোধী’ এবং ‘মহিলা বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে শুভেন্দু আরও বলেন, “উনি হিন্দু বিরোধী, আজকের কথা শুনে মনে হয়েছে তিনি মহিলা বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী। অভয়ার বাবা মাকে কিনতে গিয়েছিলেন ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে। প্রধানমন্ত্রীকে যেভাবে আক্রমণ করলেন তার উত্তর বাংলার মানুষ দিয়ে দেবে। ২৬ সালে বাংলার মানুষ প্রাক্তন করে দেবে। ভবানীপুরে হারাব।”
লোকসভা নির্বাচনের আগে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে এই বাকযুদ্ধ রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে, যা আসন্ন ভোটে বড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।