
মধ্যপ্রদেশের এক বিজেপি মন্ত্রীর বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। দেশের সুরক্ষায় নিয়োজিত ভারতীয় সেনার এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক, কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে ‘সন্ত্রাসবাদীর বোন’ বলে কটূক্তি করেছেন আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রী কুনওয়ার বিজয় শাহ। মন্ত্রীর এমন কুৎসিত মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে কর্নেলের পরিবার, স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ নিয়েছে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট এবং সরব হয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেস।
মন্ত্রীর মন্তব্য ও পরিবারের প্রতিক্রিয়া:
একটি সরকারি সভায় বক্তৃতা করার সময় মন্ত্রী বিজয় শাহ কর্নেল কুরেশিকে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য করেন। মধ্যপ্রদেশের ছাতারপুরে থাকা কর্নেল কুরেশির ভাই বান্টি সুলেমান এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেন, “ভারত সরকারের উপর আমাদের বিশ্বাস আছে। সরকার নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করবে। মানুষই মন্ত্রীর মন্তব্যের উত্তর দেবে।” কর্নেলের কাকা বালি মহম্মদ, যিনি একসময়ে বিএসএফের জওয়ান ছিলেন, মন্ত্রীর মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “আমরা আমাদের দেশকে ভালোবাসি। যতদিন বাঁচব, ততদিনই ভালোবেসে যাব দেশকে। মন্ত্রীর মন্তব্য শত্রুতার পরিবেশ তৈরি করতে পারে।” পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁদের মেয়ে দেশের সেবিকা। মন্ত্রী যা বলেছেন, তার জবাব দেবে দেশের মানুষ।
আদালতের পদক্ষেপ ও মন্ত্রীর আইনি লড়াই:
মন্ত্রীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট এবং মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়। বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে মামলার শুনানিতে মন্ত্রী বিজয় শাহ এফআইআরে স্থগিতাদেশের আবেদন জানালেও হাইকোর্ট তাতে কর্ণপাত করেনি। এরপরই বিজেপি নেতা এই এফআইআর-এর নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। শুক্রবার সকালে সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলার শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। পরবর্তী শুনানি আগামী ১৯ মে ধার্য করা হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও কংগ্রেসের প্রতিবাদ:
কংগ্রেস প্রথম থেকেই বিজেপি মন্ত্রী বিজয় শাহের ইস্তফা দাবি করে আসছে। মধ্যপ্রদেশের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জিতু পাটওয়ারি গত বুধবার, ১৪ মে, বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন। শুক্রবার সকালে মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার দাবিতে ভোপালে রাজভবনের সামনে প্রতিবাদও করেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। মন্ত্রীকে বরখাস্ত করার দাবিতে রাজ্যপাল মঙ্গুভাই প্যাটেলের কাছে একটি স্মারকলিপিও জমা দেন তাঁরা।
কে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি?
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার জবাবে ৬-৭ মে রাতে ভারতীয় সেনা ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালায় এবং পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ন’টি জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয়। এই অভিযানের পরেই ৭ মে সকালে হওয়া প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রীর সঙ্গে ভারতীয় সেনার তরফে উপস্থিত ছিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। ভারতীয় সেনা কীভাবে জঙ্গিঘাঁটিগুলিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, সেই বিষয়ে তাঁরাই বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। ১০ মে পর্যন্ত হওয়া চারটি মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী বা সেনার কমোডোরের সঙ্গী ছিলেন এই দুই মহিলা আধিকারিক। প্রতিবারই তাঁরা পাক সেনার হামলা থেকে শুরু করে ভারত কীভাবে শত্রুকে প্রতিরোধ করেছে, তা বিশদে তুলে ধরেছেন। দেশের হয়ে যিনি এমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, সেই সেনা আধিকারিককেই মন্ত্রীর এমন কুরুচিকর আক্রমণ নিঃসন্দেহে বিতর্কিত।