
পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর শহরে থাকা একটি মেসবাড়ি থেকে এক ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার বেশি রাতে কেরানীচটি এলাকায় থাকা ওই মেসবাড়ি থেকে ২১ বছর বয়সী স্নেহা আদক নামে ওই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার করা হয়। স্নেহা মেদিনীপুর সিটি কলেজে ভূগোল বিষয় নিয়ে স্নাতকোত্তর করছিলেন। পুলিশ প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে অনুমান করলেও, মেধাবী এই ছাত্রীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য ঘনাচ্ছে।
স্নেহা আদক মেদিনীপুর সিটি কলেজে স্নাতকোত্তরের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী ছিলেন। পুলিশ প্রাথমিকভাবে অনুমান করছে যে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট আজ শনিবার এলেই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে আরও কিছু স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
এই মেধাবী ছাত্রীর আত্মহত্যা নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কারণ যে ছাত্রীকে দিনে বেশ হাসিখুশি এবং স্বাভাবিক দেখা গেল, তিনি কীভাবে রাতে এমন চরম পথ বেছে নিলেন, তা কেউই বুঝতে পারছেন না। পুলিশ সূত্রে খবর, স্নেহার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে। প্রত্যেক শুক্রবার ক্লাস শেষের পরে সাধারণত তিনি বাড়ি চলে যেতেন। সেখানে গত রাতে কেরানীচটি এলাকার মেসে স্নেহা–সহ আরও পাঁচজন ছাত্রী ছিলেন। তারা কেউ কিছু টের পেলেন না কেন? এই প্রশ্নই পুলিশের সন্দেহ বাড়িয়েছে। নেপথ্যে কি র্যাগিং ছিল? নাকি অন্য কোনও ব্যক্তিগত কারণ ছিল? তদন্ত করে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
অন্যদিকে পুলিশ জানতে পেরেছে, গতকাল সন্ধ্যায় স্নেহার বাবা সুদীপ কুমার আদক তাকে ফোন করেন। কিন্তু মোবাইল ফোন সুইচড অফ ছিল। তাই মেয়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়ে ওঠেনি। তখন স্নেহার বাবা ফোন করেন মেসবাড়ির মালিককে। মেসবাড়ির মালিক তখন স্নেহাকে বেশ কয়েকবার ডাকেন। তখন স্নেহা নিজের রুমেই ছিলেন। অথচ ভেতর থেকে কোনও সাড়া মিলছিল না। স্নেহার রুম ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। মেসবাড়ির মালিক তখন তাঁর ছেলেকে ডাকেন এবং দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখেন স্নেহার ঝুলন্ত দেহ। তখনই পুলিশ এবং স্নেহার বাবাকে ফোন করে খবর দেন মেসবাড়ির মালিক।
এছাড়া স্নেহার রুম থেকে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি। তদন্তের কারণে স্নেহার মোবাইল ফোনটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। রাতেই মেদিনীপুরে চলে আসেন স্নেহার বাবা এবং দাদা। বাবা সুদীপ কুমার আদক সংবাদমাধ্যমে জানান, তাঁর মেয়ে মেধাবী এবং এই কাজের কারণ তাঁর কাছে অজানা। মেদিনীপুর সিটি কলেজে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন স্নেহা। কলেজ সূত্রে খবর, শুক্রবার স্নেহা মন দিয়েই ক্লাস করেন এবং ক্যান্টিনে বন্ধুদের সঙ্গে গল্পও করেছেন। সেদিন তার মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। যদিও স্নেহার সহপাঠীদের সূত্রে অন্য একটি খবর সামনে এসেছে। তাদের দাবি, প্রেমের সম্পর্কে আঘাত পেয়েই হয়তো আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন স্নেহা।
পুলিশ এই মৃত্যুর পেছনের আসল কারণ খুঁজে বের করার জন্য সব দিক খতিয়ে দেখছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং ফোনের ফরেন্সিক পরীক্ষার ফলাফলের পর এই রহস্যের জট খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।