
২০২৫ সালের ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদে ছড়িয়ে পড়া হিংসার ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। হাইকোর্ট রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। শুক্রবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস হিংসা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করছেন। ১১ এপ্রিলের হিংসা মুর্শিদাবাদের সুতি, সামশেরগঞ্জ ও ধুলিয়ান এলাকায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ইতিমধ্যেই ২৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বহু পরিবার বাস্তুচ্যুত।
এই অস্থিরতার মাঝে সকলের নজর কেড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ও প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানের অনুপস্থিতি ও নীরবতা। তিনি সরাসরি হিংসা কবলিত এলাকার সাংসদ না হলেও (তিনি বহরমপুর আসনের প্রতিনিধি), তাঁর এলাকা কাছাকাছি হওয়ায় তাঁর অনুপস্থিতি দলের মধ্যেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
তৃণমূল সাংসদ আবু তাহের খান বলেন, “তিনি একজন বহিরাগত, রাজনীতিতে নতুন। কিন্তু এই সময় দূরে থাকা ভুল বার্তা দিচ্ছে। আমরা সকলে মাঠে কাজ করছি, কিন্তু তিনি নেই”। অন্যদিকে, ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবির বলেন, “এই ভদ্রলোক এখন ভোটারদের সঙ্গে খেলা খেলছেন। এইভাবে চললে আমি দলীয় নেতৃত্বের কাছে আবেদন করব যাতে তিনি পরেরবার টিকিট না পান”।
যেখানে অন্য নেতারা ময়দানে নেমে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, সেখানে পাঠান তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় “শান্ত বিকেলের চা” উপভোগ করার ছবি শেয়ার করছেন, যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, “আনন্দময় বিকেল, ভালো চা, এবং শান্ত পরিবেশ। কেবল মুহূর্তটি উপভোগ করছি”। মুর্শিদাবাদের সংঘর্ষের ঠিক পরের দিন ইউসুফ পাঠানের এই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টটি প্রকাশ্যে আসে, যা দ্রুত ভাইরাল হয় এবং ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, পাঠানকে শেষবার রমজান মাসে ইফতার পার্টিতে দেখা গিয়েছিল। এরপর থেকে তিনি এলাকায় আসেননি। এমনকি হিংসার ঘটনার পর থেকে এখনও পর্যন্ত তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাননি বা কোনও দলীয় বৈঠকে অংশ নেননি।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীকে পরাজিত করে ইউসুফ পাঠান বহরমপুর আসন দখল করেছিলেন। তবে তাঁর জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান আচরণে দলের ভেতরে অনাস্থার সঞ্চার হয়েছে, যা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
মুর্শিদাবাদ যখন উত্তাল, রাজ্য প্রশাসন, আদালত ও রাজ্যপাল যখন সক্রিয়, তখন একজন জনপ্রতিনিধির এই ধরনের নিষ্ক্রিয়তা রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি করছে, যা বিরোধীরা ইতিমধ্যেই তুলে ধরছেন এবং দলীয় মহলেও অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছেন ইউসুফ পাঠান। আগামী দিনে দল তাঁকে নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, এখন সেটাই দেখার।