
আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনা যেন এক জীবন্ত মৃত্যুপুরী। একের পর এক হৃদয়বিদারক কাহিনি উঠে আসছে, আর প্রতিটি কাহিনিই শোক আর হাহাকারের নতুন মাত্রা যোগ করছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ২৭০ ছাড়িয়েছে, এবং শনিবারও আরও বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে আছেন ছাত্রাবাসের পড়ুয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মরত কর্মী। আহমেদাবাদ দমকল পরিষেবার আধিকারিকেরা গত ২৪ ঘণ্টায় দুর্ঘটনাস্থল এবং সংশ্লিষ্ট হোস্টেলের ক্যান্টিন থেকে বহু দেহ ও দেহাংশ উদ্ধার করেছেন।
এই দুঃসহ পরিস্থিতির মাঝেই সামনে এসেছে এক মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ। আহমেদাবাদের ঘরে বসে চোখে জল নিয়ে বিলাপ করে চলেছেন রবিনা ড্যানিয়াল ক্রিশ্চিয়ান। মাত্র ১৫ দিন আগেই তিনি হারিয়েছেন স্বামীকে। বাবার শেষকৃত্যে লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছিলেন তার ৩০ বছর বয়সী ছেলে লরেন্স ড্যানিয়াল ক্রিশ্চিয়ান। কাজ শেষ, ১২ই জুন লন্ডনে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা লরেন্সের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
চোখে জল নিয়ে রবিনা বারবার আওড়ে চলেছেন একই কথা, “এই তো কয়েকদিনের জন্য এসেছিল। ওর বাবার শেষ কাজের জন্য। ১২ তারিখে ফিরে যাচ্ছিল…সব শেষ। আমার আর কেউ রইল না।” লন্ডনে কাজ করতেন লরেন্স। ধীরে ধীরে নিজের জীবন গুছিয়েও নিচ্ছিলেন, তেমনই বলছেন রবিনা। সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, রবিনা জানিয়েছেন লরেন্স তাকে প্রায়ই বলত, ফ্ল্যাটের ঋণ মিটে গেলেই মা’কে নিজের কাছে নিয়ে যাবে। “সে দিন আর এল না,” শোকাতুর ও রুদ্ধ কণ্ঠে বলছেন মা।
রবিনা নিজেই ছেলেকে বিমানবন্দরে বিমানে তুলে দিয়ে এসেছিলেন। বিমানে উঠেও ছেলে ভিডিও কল করে মাকে জানিয়েছিল, ভারতীয় সময় রাত ১০টা কিংবা ১১টার মধ্যে পৌঁছে যাবে, আর পৌঁছানো মাত্রই মাকে ফোন করবে। মা অধীর আগ্রহে সেই ফোনের অপেক্ষায় ছিলেন, সময়ের কাঁটা ধরে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তার মাঝেই ফোন আসে লরেন্সের বন্ধুর। সে জানায় বিমান দুর্ঘটনার কথা। এরপর থেকে শুরু হয়েছে এক অনন্ত অপেক্ষা, যা শেষ হওয়ার নয়। লরেন্সের বোন ডিএনএ-এর নমুনার জন্য নমুনা দিয়েছেন, প্রিয় ভাইয়ের শেষ চিহ্নটুকু পাওয়ার আশায়।
এই করুণ কাহিনি কেবল একটি পরিবারের নয়, বিমান দুর্ঘটনার ফলে অসংখ্য পরিবারের ভেঙে পড়ার এক প্রতিচ্ছবি। এই শোক কাটিয়ে ওঠা হয়তো কখনও সম্ভব হবে না, কিন্তু প্রিয়জনের স্মৃতির ভার নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে এদের।