
মায়ের অপমান এবং সেবা না করার ক্ষোভে নিজের স্ত্রীকে খুন করে দেহ সেফটি ট্যাঙ্কে ফেলে দেওয়ার মতো এক ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠেছে খোদ মসজিদের ইমামের বিরুদ্ধে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা বাংলাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩রা ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের ধনুসাড়া গ্রামে শাহিদা বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধার মৃতদেহ নিখোঁজ হওয়ার পর বাড়ির সেফটি ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হয়। ঘটনার প্রায় তিন মাস পর চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে।
বৃহস্পতিবার চৌদ্দগ্রাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিলাল উদ্দিন আহমেদ জানান, পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে শাশুড়ি ও স্বামীকে প্রতিনিয়ত অপমান এবং শাশুড়ির সেবা যত্ন না করার ক্ষোভ থেকেই স্বামী আব্দুল মমিন (৬৮) তাঁর স্ত্রী শাহিদাকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেছেন। অভিযুক্ত আব্দুল মমিন পেশায় একজন মসজিদের ইমাম ছিলেন।
প্রাথমিকভাবে এই ঘটনায় নিহত শাহিদা বেগমের ছেলে মো. মাছুম বিল্লাহ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় মৃতার স্বামী আব্দুল মমিনকেই প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত চালায় এবং আব্দুল মমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। টানা জিজ্ঞাসাবাদের মুখে বেরিয়ে আসে আসল সত্য। পুলিশ জানতে পারে, স্বয়ং স্বামী আব্দুল মমিনই বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর বিবস্ত্র করে বাড়ির উত্তর পাশে শৌচাগারের সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দিয়েছিলেন। এই স্বীকারোক্তির পর গত ২৭শে মার্চ পুলিশ আব্দুল মমিনকে গ্রেফতার করে। ক্লু-বিহীন এই হত্যাকাণ্ডের মামলার তদন্ত করেন চৌদ্দগ্রাম থানার উপপরিদর্শক হেশাম উদ্দিন।
ওসি আরও জানান, গত বুধবার বিকেলে কুমিল্লার আদালতে আব্দুল মমিন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে মমিন দাবি করেন যে তাঁর মায়ের বয়স প্রায় ১৩০ বছরের কাছাকাছি এবং মা চলাফেরা করতে না পারলেও সুস্থ আছেন। মায়ের সেবাযত্ন নিয়ে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়শই ঝগড়া হতো। মমিন তাঁর মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণের বিষয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। ঘটনার দিন গভীর রাতে নতুন বাড়িতে শারীরিক সম্পর্কের পর মমিন তাঁর স্ত্রী শাহিদাকে মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের কথা জিজ্ঞেস করেন। অভিযোগ, তখন শাহিদা মমিনকে গালিগালাজ করতে শুরু করেন। এতে মমিন অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে পাশে থাকা বালিশ দিয়ে স্ত্রীর মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে তাঁকে হত্যা করেন।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আব্দুল মমিন আরও জানান যে, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর তিনি অনেক চিন্তাভাবনা করেন। ভোর সাড়ে ৪টার দিকে স্ত্রীর মরদেহ কাঁধে তুলে নিয়ে বাড়ির উত্তর পাশের শৌচাগারের সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে দেন এবং ঢাকনাটি আবার লাগিয়ে দেন। এরপর ভোর ৫টার দিকে তিনি মসজিদে চলে যান। মসজিদ থেকে ফিরে এসে তিনি ছেলে মাছুম বিল্লাহকে ফোন করে জানান যে, “তোমার মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।” অনেক খোঁজাখুঁজির পর গত ৩রা ফেব্রুয়ারি সকালে ধনুসাড়া গ্রাম থেকে শাহিদা বেগমের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আব্দুল মমিনকে আদালতে পাঠানো হয়েছিল। এরপর তাকে আরও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী গত ২১শে এপ্রিল তাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চৌদ্দগ্রাম থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মমিন স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং আদালতে জবানবন্দি দেন।