মাথা ও গলার ক্যানসারের চিকিৎসায় মিলল যুগান্তকারী ফল, মরণব্যাধি রোগের নতুন দিগন্ত

ক্যানসার চিকিৎসায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। মাথা ও গলার ক্যানসার, যা এতদিন নিরাময়ে সবচেয়ে কঠিন বলে বিবেচিত হতো, তার চিকিৎসায় একটি ইমিউনথেরাপি ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল যুগান্তকারী ফলাফল এনেছে। এই নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি ক্যানসারের পুনরাগমনকে বাধা দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে দেয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি শনিবার (৩১ মে) এক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ করেছে।

ট্রায়ালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মাথা ও গলার ক্যানসারের চিকিৎসায় এই ওষুধটি গত ২০ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এতদিন এই ক্যানসারের চিকিৎসায় প্রায় একইরকম পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছিল এবং এর ফলস্বরূপ, এই ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত বেশিরভাগ ব্যক্তিই সাধারণত পাঁচ বছরের মধ্যেই মারা যেতেন।

ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারের বাসিন্দা লরা মার্টসন এই ওষুধের প্রয়োগের এক জীবন্ত উদাহরণ। ছয় বছর আগে যখন তার জিহ্বার ক্যানসার ধরা পড়ে এবং তা ঘাড় ও অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন তাকে বলা হয়েছিল তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম, মাত্র ৩০ শতাংশ। কিন্তু ইমিউনথেরাপি ওষুধ পেমব্রোলিজুমাব গ্রহণ করে তিনি আজো জীবিত, যা তার কাছে “আশ্চর্যজনক” বলে মনে হয়েছে। তার দেহ থেকে ক্যানসার দূর করতে অস্ত্রোপচার করা হয়। এই অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে তিনি ইমিউনথেরাপি ওষুধটি গ্রহণ করেন। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ওষুধ শরীরে ক্যানসার ফিরে এলে তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে কাজ করে।

চিকিৎসা পদ্ধতির নতুন কৌশল:

লন্ডনের ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞরা আন্তর্জাতিক গবেষণার অংশ হিসেবে ৩৫০ জন রোগীর ওপর পেমব্রোলিজুমাব নামের ইমিউনথেরাপি ওষুধটি প্রয়োগ করেন। তাদের অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে এই ওষুধ দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যে এই ট্রায়ালের নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রফেসর কেভিন হেরিংটন। তিনি বিবিসিকে জানান, “নতুন গবেষণায় ওষুধটি অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে দেওয়া হয়েছে। এতেই পাওয়া গেছে যুগান্তকারী ফল।” তিনি আরও বলেন, “আমরা (অস্ত্রোপচারের আগে) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্যানসারের টিউমারকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেই যেন টিউমার বিরোধী প্রতিরোধের সৃষ্টি হয়। এরপর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্যানসারের টিউমার অপসারণের পর ওই প্রতিরোধের কার্যকারিতা ধরে রাখতে টানা এক বছরের বেশি সময় ওষুধটি প্রয়োগ করতে থাকি।”

এই নতুন পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া ৩৫০ জন রোগীকে পুরোনো পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া আরও ৩৫০ জন রোগীর সঙ্গে তুলনা করা হয়। ফলাফল ছিল অত্যন্ত ইতিবাচক। এই ওষুধটি আক্রান্ত ব্যক্তির ক্যানসার মুক্ত থাকার সময় দ্বিগুণ করে দিয়েছে – গড়ে আড়াই বছর থেকে পাঁচ বছরে উন্নীত হয়েছে। তিন বছর পর দেখা গেছে, যেসব রোগীকে পেমব্রোলিজুমাব ওষুধটি দেওয়া হয়েছে, তাদের শরীরে ক্যানসার ফিরে আসার ঝুঁকি ১০ শতাংশ কম ছিল।

গবেষকরা মনে করছেন, এই ওষুধটি মাথা ও গলার ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের আগে দেওয়াটা বেশি জরুরি, কারণ এর মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই শিখিয়ে দেয়। লরা মার্টসনের মতো অনেকের জীবন বদলে দেওয়া এই ওষুধ ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy