“মাথার দাম ছিল ৪৫ লক্ষ টাকা”-সেনার গুলিতে খতম আরও এক শীর্ষ মাওবাদী নেতা

ছত্তিশগড়ে মাওবাদী দমন অভিযানে ফের এক বিরাট সাফল্য অর্জন করল নিরাপত্তা বাহিনী। বিজাপুর জেলায় এক এনকাউন্টারে সিপিআই (মাওবাদী)-র তেলঙ্গানা স্টেট কমিটির এক শীর্ষ নেতার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি একে-৪৭ রাইফেল ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক। এই ঘটনা মাওবাদী সংগঠনকে আরও বড় ধাক্কা দিল বলে মনে করছে প্রশাসন।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহত মাওবাদী নেতা হলেন ভাস্কর রাও ওরফে মাইলারাপু আদেল্লু। তিনি সিপিআই (মাওবাদী)-র তেলঙ্গানা স্টেট কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং তেলঙ্গানা স্টেট কমিটির স্পেশাল জোনাল কমিটিরও সদস্য ছিলেন। আদিলাবাদ জেলার বাসিন্দা ভাস্করের মাথার দাম ধার্য করা হয়েছিল ৪৫ লক্ষ টাকা, যা তার সাংগঠনিক গুরুত্বের পরিচয় বহন করে। এই নিধন মাওবাদীদের তেলঙ্গানা-ছত্তিশগড় করিডোরে একটি বড় আঘাত বলে মনে করা হচ্ছে।

এই সাফল্য এমন এক সময়ে এলো, যখন সম্প্রতি ছত্তিশগড়ের অবুঝমাড় এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযানে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মাওবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক নামবালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজ নিহত হয়েছিলেন। এই অভিযানকে ভারতের মাওবাদী নির্মূল অভিযানের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ছত্তিশগড় পুলিশের DGP আরকে বীজ সেই সময় বলেছিলেন, “বাসবরাজ কোনো সাধারণ মাওবাদী ছিলেন না। অন্ধ্রপ্রদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রপআউট বাসবরাজ ২০১৮ সালে গণপতির স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। দলের সাংগঠনিক রাজনীতিকে তিনি সশস্ত্র আন্দোলনের পথে চালিত করেছিলেন। শুধুমাত্র নামে কমান্ডার নন, ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী উগ্রপন্থী সংগঠনের প্রধান ছিলেন।”

DGP-এর আরও বক্তব্য ছিল, “এত কড়া সুরক্ষা বলয়ে চলাফেরা করা দলের সাধারণ সম্পাদক, যাঁর আশপাশে ৬০-৭০ জন সশস্ত্র মাওবাদী ঘিরে থাকত, তার মৃত্যু প্রমাণ করছে আমাদের ইন্টেলিজেন্স অত্যন্ত শক্তিশালী। এর প্রভাব মাওবাদী ক্যাডারদের উপর পড়েছে। এতে আত্মসমর্পণের পালা বাড়বে।”

সংগঠনের নেতৃত্ব নিয়ে নতুন হিসেব নিকেশ:

বাসবরাজের মৃত্যুর পর মাওবাদী সংগঠন তাদের নেতৃত্ব নিয়ে এক বড় সংকটে পড়েছে। কে তার স্থানে বসবে, বাসবরাজের মতো প্রভাবশালী নেতৃত্ব কে দেবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই মাওবাদীদের মধ্যে হিসেব নিকেশ চলছে। এর মধ্যেই ভাস্করের মতো আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতার নিধন তাদের সাংগঠনিক শক্তিকে আরও দুর্বল করে দিল। এর আগে গত বৃহস্পতিবার গৌতম ওরফে সুধাকর নামে সেন্ট্রাল কমিটির এক সদস্যের দেহও উদ্ধার করা হয়েছিল, যার কাছ থেকে একটি একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

ধারাবাহিক এই সাফল্যগুলি নিরাপত্তা বাহিনীর উন্নত গোয়েন্দা তথ্য এবং কৌশলী অভিযানের ফলশ্রুতি। এটি মাওবাদী আন্দোলনকে প্রান্তিক করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy