মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত পুণ্যার্থীর সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হয়েছে, বিস্ফোরক রিপোর্ট BBC-র

মৌনী অমাবস্যার দিন এলাহাবাদের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি-এর বিস্ফোরক রিপোর্ট সামনে আসতেই নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সেদিন অন্তত ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যা সরকারিভাবে ঘোষিত সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি। এই তথ্য সামনে আসতেই বিরোধীরা উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের তীব্র অভিযোগ তুলেছে।

বিবিসি-এর রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, দুর্ঘটনার বিষয়ে তথ্য গোপন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই পুলিশ প্রাথমিক ভাবে ৩০ জনের মৃত্যুর কথা বললেও, এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেনি। এমনকি পরে সরকারিভাবে পদপিষ্ট হয়ে মৃতের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। সম্প্রতি কুম্ভমেলায় নিহতদের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত এক মামলায় এলাহাবাদ হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে নিহতের মোট সংখ্যা জানতে চাইলেও, সে বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য মেলেনি।

এই আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, তারা ২৬টি পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছে যাদের ৫ লাখ টাকা নগদ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। তবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সময় কোনো নথিতে ক্ষতিগ্রস্তদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। বিবিসি দেশের ৫০টিরও বেশি জেলা ঘুরে প্রায় ১০০টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে। সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখে তারা রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে, মৌনী অমাবস্যার দিন পদপিষ্ট হয়ে কমপক্ষে ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সাফল্যের আড়ালে মৃত্যুসংখ্যা বিতর্ক
মহাকুম্ভের ওই দুর্ঘটনার চার মাসেরও বেশি সময় কেটে গেলেও উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার মৃতের সংখ্যা নিয়ে এখনও কোনো স্পষ্ট তথ্য দেয়নি। এদিকে, মহাকুম্ভ মেলা শেষ হওয়ার পর কেন্দ্র ও যোগী সরকার তাদের সাফল্য রিপোর্টে দাবি করে, ৪৫ দিনের কুম্ভে ৬৬ কোটি মানুষ যোগ দিয়েছিলেন এবং এর জন্য ৭০০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।

তবে, সংবাদ সংস্থার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মহাকুম্ভে ৩০ জনের মৃত্যু এবং ২৯টি মৃতদেহ শনাক্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, মহাকুম্ভে কিছু ‘প্রেসার পয়েন্ট’ তৈরি হওয়াতেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিবিসি-এর রিপোর্টও এই ‘প্রেসার পয়েন্ট’-এর তথ্য তুলে ধরেছে এবং জানিয়েছে যে, দুর্ঘটনার সময়ে চারের বেশি ‘প্রেশার পয়েন্ট’ তৈরি হয়েছিল।

আদালতের তিরস্কার ও আরও মৃত্যুর আশঙ্কা
উল্লেখ্য, বিবিসি-এর রিপোর্টের শেষে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে যে, মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃতের সংখ্যা ৮২-এর থেকেও বেশি হতে পারে। কিন্তু প্রত্যক্ষ প্রমাণের অভাবে তারা এর বেশি তথ্য তুলে ধরতে পারছে না। সংবাদ সংস্থা দাবি করেছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের অসংখ্য বিবরণ, ছবি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলেই তারা মৃতের সংখ্যা ৮২ বলে দাবি করছে।

কুম্ভমেলায় পদপিষ্টের ঘটনায় আর্থিক সাহায্য না মেলায় সম্প্রতি এলাহাবাদ হাইকোর্টের তিরস্কারের মুখে পড়েছে যোগী সরকার। বিবিসি-এর এই রিপোর্ট রাজ্য সরকারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের মহাকুম্ভের স্মৃতি যখন ২০২৫ সালের আসন্ন মহাকুম্ভের (Mahakumbha 2025) প্রস্তুতি চলছে, তখন এই রিপোর্ট এক নতুন বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy