
৪১ বছর পর ভারতের মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। বুধবার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) অ্যাক্সিওম স্পেসের বাণিজ্যিক মিশনে আরও তিন মহাকাশচারীর সঙ্গে পাড়ি দিয়ে ইতিহাস গড়লেন ভারতীয় মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা। ১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মার পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে মহাকাশে পা রেখে তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে এক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠলেন।
ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দুপুর ১২টা ০১ মিনিটে স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে চেপে আইএসএসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন শুভাংশু ও তাঁর সঙ্গীরা। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হতে লখনউয়ের ‘সিটি মন্টেসরি স্কুল’-এর প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন শুভাংশুর বাবা-মা, যে স্কুল থেকে তিনি তার শৈশবের পাঠ গ্রহণ করেছেন। এই ঘটনা তাঁদের কাছে ছিল এক গর্বের, এক স্বপ্নপূরণের মুহূর্ত।
উৎক্ষেপণের মাত্র ১০ মিনিট পরই মহাকাশচারীরা পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ শুরু করেন। কক্ষপথে প্রবেশ করার পরই শুভাংশু শুক্লার প্রথম বার্তা ছিল আবেগঘন এবং ভারতের জন্য এক ঐতিহাসিক ঘোষণা। তিনি বলেন, “৪১ বছর পর ভারত আবার মানব মহাকাশযাত্রায় ফিরে এসেছে।” তার এই উক্তি যেন দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষাকেই প্রতিফলিত করেছে।
মহাকাশযানটি পৃথিবী থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার উচ্চতায় কক্ষপথে প্রবেশের পরপরই শুভাংশু শুক্লা উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, “এটি একটি আশ্চর্যজনক যাত্রা ছিল।” প্রায় ২৮ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে ৩০ মিনিটে মহাকাশযানটি আইএসএসে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুভাংশু শুক্লাই প্রথম ভারতীয় মহাকাশচারী যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন পরিদর্শন করছেন, যা ভারতের মহাকাশ গবেষণার জন্য এক উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। ৪১ বছর আগে, রাকেশ শর্মা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্যালিউট-৭ মহাকাশ স্টেশনে আট দিন কাটিয়েছিলেন।
কক্ষপথে পৌঁছে শুভাংশু শুক্লা দেশবাসীকে উদ্দেশ করে বলেন, “নমস্কার, আমার প্রিয় দেশবাসী; ৪১ বছর পর আমরা মহাকাশে পৌঁছেছি, এটি একটি অসাধারণ যাত্রা। এই মুহূর্তে আমরা প্রতি সেকেন্ডে সাড়ে সাত কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছি এবং আমার কাঁধে আমার তেরঙ্গা রয়েছে যা আমাকে বলছে যে আমি একা নই, (কিন্তু) আমি তোমাদের সকলের সঙ্গে আছি।” তার এই বার্তা যেন কোটি কোটি ভারতবাসীর মনে দেশপ্রেম ও গর্বের এক নতুন স্পন্দন তৈরি করেছে।
তিনি আরও বলেন, “এটা আমার আইএসএস-এ যাত্রার শুরু নয়, (বরং) এটি ভারতের মানব মহাকাশ কর্মসূচির শুরু এবং আমি চাই আপনারা সকল দেশবাসী এই যাত্রার অংশ হোন। আসুন, আমরা সবাই মিলে ভারতের এই মানব মহাকাশ যাত্রা শুরু করি।” মহাকাশযাত্রার আগে তিনি বলেছিলেন, “আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে, যদিও আমি একজন ব্যক্তি হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণ করছি, আসলে এটি ১৪০ কোটি মানুষের (ভারতীয়দের) যাত্রা।” তার এই বক্তব্য ভারতের যৌথ স্বপ্ন এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রতীকী প্রকাশ।
কক্ষপথে পৌঁছানোর পর, মহাকাশচারীরা তাদের নতুন ক্যাপসুলের নাম দেন ‘গ্রেস’। আগামী ১৪ দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থানকালে তারা ৬০টি ভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করবেন। শুভাংশু শুক্লার এই ঐতিহাসিক যাত্রা ভারতের মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল, যা আগামী প্রজন্মের বিজ্ঞানীদের কাছে এক নতুন প্রেরণা হয়ে থাকবে।