
মাসখানেক আগে নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের পর এবার দিঘা সাক্ষী হতে চলেছে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের – প্রথমবারের মতো জাঁকজমকপূর্ণ রথযাত্রা। দিঘাবাসীর কাছে এবারের রথযাত্রা তাই অন্যরকম, এক নতুন উৎসবের সূচনা। আর এই মেগা আয়োজনের আনুষ্ঠানিক শুভ সূচনা হলো আজ, স্নানযাত্রা দিয়েই।
আজ সকাল ৯টায় নিয়ম মেনে শুরু হয়েছে পাহাণ্ডি বিজয় উৎসব। এরপর বেলা ঠিক ১১টায় জগন্নাথ, বলদেব ও সুভদ্রার স্নানযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে দিঘা মন্দিরের প্রবেশদ্বারের বাঁদিকে তৈরি বিশেষ মণ্ডপে, ভক্তদের সামনেই। স্নানযাত্রার পর দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভক্তরা গজবেশ দর্শন করতে পারবেন। রাতে গজবেশে ভক্তদের সামনে ধরা দেবেন জগন্নাথ, এরপরই তিনি চলে যাবেন অন্তরালে।
অন্তরালে জগন্নাথ: নিভৃত বিশ্রাম ও নবযৌবন
আগামীকাল, ১২ জুন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত মন্দিরে দর্শন বন্ধ থাকবে। শাস্ত্রীয় বিধি মেনেই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা এই সময় অন্তরালে থাকবেন, কারণ বিশ্বাস করা হয় যে ১০৮ ঘড়া জলে স্নান করার পর তাদের জ্বর আসে। তাই এই ক’দিন প্রভু জগন্নাথ বিশ্রামে থাকেন এবং লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান।
২৬ জুন: নবযৌবন ও নেত্র উৎসব
সুদীর্ঘ ১৫ দিনের বিশ্রাম শেষে ২৬ জুন (বৃহস্পতিবার) হবে জগন্নাথদেবের নবযৌবন ও নেত্র উৎসব। এরপরই ভক্তরা ফের জগন্নাথদেবকে দর্শন করতে পারবেন।
২৭ জুন: প্রথম রথযাত্রা, মাসির বাড়ির পথে
বহু প্রতীক্ষিত রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে ২৭ জুন (শুক্রবার), আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়ায়। এই দিন রথে চড়ে ‘মাসির বাড়ি’ যাবেন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা। দিঘা থানার পাশে একটি পুরনো মন্দিরকে অস্থায়ীভাবে জগন্নাথদেবের ‘মাসির বাড়ি’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। পরবর্তী ৭ দিন রথ সেখানেই থাকবে এবং মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হবে। ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাস জানিয়েছেন, জগন্নাথ ধাম মন্দির থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি ছোট জগন্নাথ মন্দির রয়েছে এবং সেখানেই পাশে আরও একটি নতুন ‘মাসির বাড়ি’ মন্দির তৈরি করা হচ্ছে।
পুরীর আদলে দিঘার রথযাত্রা
এই রথযাত্রা পুরীর আদলে আয়োজন করা হচ্ছে। পাথরের বিগ্রহ জগন্নাথ মন্দিরে থাকলেও, রথের জন্য নিম কাঠের মূর্তি প্রস্তুত করা হয়েছে। পুরীর মতোই সোনার ঝাঁটা দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে রথযাত্রার সূচনা করা হবে। তিনটি বিশাল রথ ইতিমধ্যেই প্রস্তুত করা হয়েছে এবং সেই রথের চাকা গড়াবে দিঘার রাস্তায়। নিরাপত্তার সমস্ত ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
মন্দিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইসকনের সহ-সভাপতি রাধারমণ দাস জানিয়েছেন, মন্দিরের পরিচালন কমিটি রথযাত্রার আয়োজন নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছে। আশা করা হচ্ছে, রাজ্য এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, এমনকি বিদেশ থেকেও বহু ভক্ত এবারের দিঘার রথযাত্রায় উপস্থিত থাকবেন। মন্দির কমিটির দাবি অনুযায়ী, উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ লক্ষের বেশি ভক্ত দিঘার মন্দিরে এসেছেন। দিঘার এই প্রথম রথযাত্রা যে এক নতুন ঐতিহ্য স্থাপন করতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।