“মনে হচ্ছিল যেন কেয়ামত নেমে এসেছে”- যাত্রীদের মুখেই শুনুন পাকিস্তানে ট্রেন ছিনতাইয়ের বিবরণ

পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানে গত মঙ্গলবার জাফর এক্সপ্রেস নামে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন ছিনতাই করে এর ৪৫০ জনেরও বেশি যাত্রীকে জিম্মি করেছিল স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। পাকিস্তান সেনাবাহিনী বুধবার থেকে পূর্ণমাত্রায় অভিযান শুরু করে, যার ফলে সব হামলাকারী নিহত এবং জিম্মি যাত্রীদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

হামলা ও ছিনতাই
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে নয় বগির জাফর এক্সপ্রেস কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখওয়ার পেশোয়ারের উদ্দেশে রওনা দেয়। দুপুর ১টার কাছাকাছি সময়ে বেলুচিস্তানের বোলান জেলার মুশকাফের কাছে রেলওয়ে টানেল-৮ এর নিকটে ট্রেনটিতে হামলা চালায় বিএলএ। হামলার পরপরই গোষ্ঠীটি এর দায় স্বীকার করে এবং জানায়, কারাগারে বন্দি বালোচ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি না দিলে সব যাত্রীকে হত্যা করা হবে। দাবি পূরণের জন্য তারা ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেয়।

হামলার সময় ট্রেনে ৪৫০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিলেন, যাদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন ছিলেন পাকিস্তান সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের পরিবারের সদস্য। বিএলএ’র ৩০ জন সশস্ত্র যোদ্ধা এই মিশনে অংশ নিয়েছিল।

সেনার অভিযান ও উদ্ধার
বুধবার থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। অভিযানে বিএলএ’র সব যোদ্ধাকে নিহত করা হয়। তবে অভিযান শুরুর আগেই হামলাকারীরা ২১ জন যাত্রীকে হত্যা করে। সেনাবাহিনীর তৎপরতায় বাকি ৪২৯ জন যাত্রীকে নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

যাত্রীদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা
উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা বিবিসির সঙ্গে শেয়ার করেছেন। ইশাক নূর নামে এক যাত্রী বলেন, “গুলি চলার সময় ভয়ে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আমরা জানতাম না পরবর্তী মুহূর্তে কী হবে।” মুহাম্মদ আশরাফ নামে আরেক যাত্রী জানান, “আতঙ্কে মনে হচ্ছিল কেয়ামত নেমে এসেছে।” তিনি কোয়েটা থেকে লাহোর যাচ্ছিলেন এবং হামলার পর ট্রেন থেকে নেমে চার ঘণ্টা হেঁটে নিকটবর্তী স্টেশনে পৌঁছান। তাঁর সঙ্গে নারী ও শিশুরাও ছিলেন।

মোহাম্মদ নূর নামে একজন যাত্রী, যিনি স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ পেশোয়ার যাচ্ছিলেন, বলেন, “আমরা সন্তানদের গুলি থেকে বাঁচাতে নিজেদের ঢাল করে দাঁড়িয়েছিলাম।” মুশতাক মুহাম্মদ নামে আরেক যাত্রী জানান, “হামলাকারীরা বেলুচ ভাষায় কথা বলছিল, বুঝতে পারিনি। শুধু মনে হচ্ছিল, আর বেঁচে ফিরব না।”

ঘটনার প্রেক্ষাপট
বেলুচিস্তানে দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিএলএ। তারা পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে প্রদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ ও স্থানীয়দের প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ তুলে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত। এই ঘটনা প্রদেশের চলমান অস্থিরতারই একটি প্রতিফলন।

উদ্ধারকৃত যাত্রীদের নিরাপদে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ঘটনায় পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। তবে এটি বেলুচিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

সূত্র: বিবিসি

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy