মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কালো মেঘ, হরমুজের অশনি সংকেত, ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপ

মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ক্রমশই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে। ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নজিরবিহীন হামলার পর থেকে এই অঞ্চলে যুদ্ধের দামামা আরও তীব্র হয়েছে। এমন এক গুরুতর পরিস্থিতিতে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেসকিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন, যা শুধুমাত্র আঞ্চলিক শান্তি নয়, ভারতের অর্থনীতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী এই কথোপকথনে মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি আলোচনার মাধ্যমে এবং কূটনৈতিক পন্থায় দ্রুত সমাধানের পথ খুঁজে বের করার জন্য দেশগুলিকে আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

মোদী-পেজেসকিয়ানের ফোনালাপ: শান্তির বার্তা

রবিবার ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনালাপের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই তাঁর এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে জানান, “ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা হয়েছে। গোটা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের সঙ্গে বিশদে আলোচনা করেছি। বর্তমানে ওই অঞ্চলে যেভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। আমাদের আবেদন, এই উত্তেজনা হ্রাস করতে আলোচনা তথা কূটনৈতিক পথে হাঁটুক দেশগুলি। আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।”

ভারত শুরু থেকেই ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতে একটি নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখেছে। উভয় দেশই ভারতের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই নয়া দিল্লি শুরু থেকেই আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ওপর জোর দিয়ে উভয় দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে। কিন্তু যত সময় গড়াচ্ছে, পরিস্থিতি ততই খারাপের দিকে যাচ্ছে।

নতুন করে উত্তেজনা: বাঙ্কার ব্লাস্টার থেকে হরমুজ প্রণালী

রবিবার ভোররাতে মার্কিন বোমারু বিমান ইরানের তিনটি মাটির নিচের পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস করতে বিধ্বংসী বাঙ্কার ব্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে। এই হামলার পাল্টা জবাবও দিয়েছে তেহরান, ইজরায়েলের দিকে ২৭টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর চাইতেও বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, ইরান বিশ্বব্যাপী তেল রপ্তানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলপথ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

হরমুজ প্রণালী: ভারতের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ

এই প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে ভারতের অর্থনীতির জন্য তা এক বিরাট বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। যদিও ভারত সরাসরি ইরান থেকে খুব বেশি তেল আমদানি করে না, তবুও ভারতকে তার মোট চাহিদার প্রায় ৮৫% এর বেশি তেল বিদেশ থেকে কিনতে হয়। এই আমদানির প্রায় ৫০ শতাংশই হরমুজ প্রণালী দিয়েই আসে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের প্রায় ২০% বাণিজ্য এই কৌশলগত জলপথ দিয়েই সম্পন্ন হয়।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যদি যুদ্ধের জেরে ইরান সত্যিই হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে ভারতের বাণিজ্য মারাত্মক বাধার সম্মুখীন হবে। ইরাক, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী থেকে আসা তেলের সরবরাহ ব্যাহত হবে, যার সরাসরি ও মারাত্মক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।

এই পরিস্থিতিতে, মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা প্রশমিত করতে এবং হরমুজ প্রণালীকে সুরক্ষিত রাখতে ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই ফোনালাপ ও কূটনৈতিক উদ্যোগকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল এখন দিল্লির এই কূটনৈতিক তৎপরতার দিকে তাকিয়ে আছে, যা হয়ত এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধের লাগাম টেনে ধরতে সাহায্য করতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy