মণিপুরে কি শেষ হচ্ছে রাষ্ট্রপতি শাসন? সরকার গড়তে ইচ্ছুক ৪৪ বিধায়ক

অবশেষে কি মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসনের অবসান হতে চলেছে? রাজ্যপাল অজয় কুমার ভাল্লার সঙ্গে বুধবার ১০ জন বিধায়কের সাক্ষাতের পর এমন জল্পনা জোরালো হয়েছে। এই বিধায়করা রাজ্যে একটি “জনপ্রিয়” সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিজেপির ৮ জন বিধায়ক, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (NPP) ১ জন বিধায়ক এবং ১ জন নির্দল বিধায়ক রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন।

সরকার গঠনে ইচ্ছুক ৪৪ জন বিধায়ক

রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মণিপুরের বিজেপি বিধায়ক থকচোম রাধেশ্যাম সিং জানান, “সাধারণ মানুষের ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে রাজ্যের ৪৪ জন বিধায়ক সরকার গড়ার লক্ষ্যে সম্মত হয়েছেন। এই বিষয়টি আমরা রাজ্যপালকে জানিয়েছি।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের রাজ্যে বর্তমানে যে সমস্যা চলছে এবং সমস্যার সমাধানে কী কী করা যেতে পারে সেই বিষয়েও রাজ্যপালের সাথে কথা হয়েছে।” থকচোম জানান, রাজ্যপাল তাঁদের এই আবেদন গ্রহণ করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বার্থে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে আশ্বাস দিয়েছেন।

তবে, থকচোম এও স্পষ্ট করে দেন যে, তাঁরা সরকার গড়তে চাইলেও এক্ষেত্রে মণিপুরে জোটের সরকার গড়ার প্রসঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই শেষ কথা বলবে। অর্থাৎ, এখন তাঁরা সরকার গড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও, এক্ষেত্রে দিল্লির নেতৃত্ব থেকে নির্দেশ পাওয়ার পরেই আনুষ্ঠানিক ভাবে দাবি জানানো হবে। এদিকে, সরকার গড়তে ইচ্ছুক ৪৪ জন বিধায়কের প্রত্যেকের সঙ্গে পৃথকভাবে ওই রাজ্যের স্পিকার টিএইচ সত্যব্রত কথা বলেছেন বলেও জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মণিপুর বিধানসভায় বিধায়কের সংখ্যা ৬০। তবে, ১ জন বিধায়কের মৃত্যু ঘটায় বর্তমানে মণিপুর বিধানসভায় ৫৯ জন নির্বাচিত সদস্য রয়েছেন।

হিংসা ও রাষ্ট্রপতি শাসনের প্রেক্ষাপট

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের মে মাস থেকেই মণিপুরের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মূলত, মেইতেই সংরক্ষণ নিয়ে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই এবং উপজাতি কুকিদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ওই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘসময় ধরে চলা হিংসাত্মক সংঘর্ষের আবহে বিশৃঙ্খলার দায় স্বীকার করে রাজ্যের তৎকালীন বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং সরে যান। এমতাবস্থায়, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ওই রাজ্যে শুরু হয় রাষ্ট্রপতি শাসন।

বর্তমান পরিস্থিতি ও বিতর্ক

সাম্প্রতিক সময়েও যে মণিপুর পুরোপুরি শান্ত এমনটা দাবি করা যাচ্ছে না। বিগত কয়েক দিনেও ওই রাজ্যে বিক্ষিপ্ত হিংসা ও অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। ইতিমধ্যেই সেখানে মণিপুর স্টেট ট্রান্সপোর্টের বাসের গা থেকে মণিপুরের নাম মুছে, তাতে “ভারত সরকার” লেখাকে ঘিরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, রাজ্যপাল ভাল্লার বিরুদ্ধে গতকালকেও বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়। এমনকি, রাজ্যের মুখ্যসচিব থেকে শুরু করে ডিজিপি এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও তোলা হয়।

এই পরিস্থিতিতে, ৪৪ জন বিধায়কের সরকার গঠনের ইচ্ছা প্রকাশ মণিপুরের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে এক নতুন মোড় দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং মণিপুর কবে একটি নির্বাচিত সরকারের অধীনে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy