
কারও মৃত্যু হয়েছে পাঁচ বছর আগে, কারও দশ বছর, তবুও তাঁদের নাম জ্বলজ্বল করছে ভোটার তালিকায়। এবার বাঁকুড়া জেলায় ভুতুড়ে ভোটারের ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মহল। কিছুদিন আগেই কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভুয়ো ভোটারদের তালিকা নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তাঁর নির্দেশে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) নেতৃত্ব বিভিন্ন ব্লকে ব্লকে ভুয়ো ভোটারদের খোঁজে নেমেছে। এরই মধ্যে বাঁকুড়ার ২ নম্বর ব্লকের মানকানালি গ্রাম পঞ্চায়েতের দুটি গ্রামে তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, ওই গ্রাম দুটির ভোটার তালিকায় ২৫ থেকে ৩০ জনের নাম রয়েছে, যাঁরা সকলেই মৃত। গ্রামবাসীদের দাবি, এদের মধ্যে কারও মৃত্যু হয়েছে ৫ বছর আগে, আবার কারও ১০ বছর আগে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ: নাম বাদ যায় না কেন?
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবারের তরফে মৃত্যুর তথ্য গ্রাম পঞ্চায়েতে জানানো হলেও শুধু রেশন কার্ড ও অন্যান্য সরকারি সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ভোটার তালিকা থেকে ওই ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়া হয় না। এই ঘটনায় গ্রামবাসীরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। তাঁদের প্রশ্ন, “মৃত মানুষের নাম কীভাবে ভোটার তালিকায় থেকে যায়? এর পিছনে কি কোনও রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে?”
রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে দায় ঠেলাঠেলি
মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় থাকার ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, সরকারি দফতরগুলিতে এখনও বামপন্থী কর্মীদের প্রভাব রয়েছে। তাঁরা বিজেপির সঙ্গে যোগসাজস করে মৃতদের নাম ভোটার তালিকায় রেখে দিয়েছে, যাতে ভোটে কারচুপির সুযোগ থাকে। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, “এটা একটা ষড়যন্ত্র। আমরা এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
পাল্টা জবাবে বামফ্রন্টের দাবি, তৃণমূল ও বিজেপির আঁতাত রাজ্যের সকলেই জানে। তাঁদের মতে, “ভোটে কারচুপি করার ক্ষেত্রে তৃণমূল সিদ্ধহস্ত। এখন নিজেদের ভাবমূর্তি বাঁচাতে এইসব নাটক করছে, কিন্তু জনগণ সব বোঝে।” অন্যদিকে, বিজেপি পুরো দায় রাজ্য সরকারের উপর চাপিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, “নির্বাচন কমিশন রাজ্য সরকারি কর্মীদের মাধ্যমেই ভোটার তালিকা তৈরি করে। মৃতদের নাম বাদ না পড়লে তার দায় তৃণমূল সরকারেরই।”
ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণে চাপ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভুয়ো ভোটারদের ইস্যুতে কড়া অবস্থান নিয়েছেন। তাঁর নির্দেশে দলীয় নেতারা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তদন্তে নেমেছেন। বাঁকুড়ার এই ঘটনা ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণের প্রয়োজনীয়তাকে আরও জোরালো করে তুলেছে। তবে এই ঘটনা নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। রাজনৈতিক দলগুলির পারস্পরিক অভিযোগের মধ্যে সাধারণ মানুষের দাবি, ভোটের আগে এই তালিকা থেকে মৃতদের নাম বাদ দেওয়া হোক।
আগামী দিনে এই ইস্যু কীভাবে সমাধান হয় এবং কোন দলের অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হয়, সেদিকে নজর রাখছে গোটা রাজ্য।
সংবাদদাতা: নির্ভীক চৌধুরী